সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকেই ইসরায়েল সিরিয়ায় বড় পরিসরে সামরিক অভিযান চালায়। সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা, অস্ত্রাগার ও কৌশলগত অবস্থানগুলো ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ইসরায়েলের দাবি, মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০টির বেশি হামলা চালিয়ে সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ ধ্বংস করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার সামরিক শক্তি সোভিয়েত-রুশ প্রযুক্তিনির্ভর, যা বেশ পুরনো। ষাট ও সত্তরের দশকে তৈরি যুদ্ধবিমান, যেমন মিগ-২১, মিগ-২৫ এবং সুখোই-২৪ ছিল এর অংশ। আশির দশকে যুক্ত কিছু আধুনিক মডেল ছাড়া এই সামরিক শক্তি প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে ছিল। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ছিল রুশ তৈরি এস-২০০ এবং মাঝারি পাল্লার প্যান্টসির-এস১। ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য স্কাড-এস ও স্কাড-ডি ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা ছিল যথাক্রমে ৩০০ ও ৭০০ কিলোমিটার।
নৌবাহিনীতে দুইটি সাবমেরিন, দুইটি ফ্রিগেট এবং ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী নৌযান ছিল। তবে সামগ্রিকভাবে এই অস্ত্রভাণ্ডার ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের হুমকি নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ইসরায়েলি সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল রাখা এবং ভবিষ্যৎ সামরিক উন্নয়ন রোধ করা। হামলার লক্ষ্যবস্তুতে ছিল সিরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ, প্রতিরক্ষা ঘাঁটি, সামরিক গবেষণা কেন্দ্র এবং অস্ত্র উৎপাদন কারখানা। উল্লেখযোগ্যভাবে হামলা চালানো হয় দামেশকের উপকণ্ঠে ব্রিগেড ১৫৫ ঘাঁটি, প্যান্টসির-এস১ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং মসিয়াফ ও জমারায়ার সামরিক গবেষণা কেন্দ্রে।
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তন ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করেছে। বাশার আল-আসাদের শাসনকাল ইসরায়েলের জন্য তুলনামূলক সুবিধাজনক ছিল। তবে নতুন সরকার গঠিত হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ইসরায়েলের ধারণা, সিরিয়ার সামরিক শক্তি পুনর্গঠন হলে তা তাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের কারণে সিরিয়ার জন্য সামরিক পুনর্গঠন সহজ হবে না। যদিও স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিছু সামরিক সক্ষমতা অর্জন সম্ভব, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ড্রোন তৈরির মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ইতিমধ্যে তা প্রমাণ করেছে।
ইসরায়েলের এই হামলাগুলো ছিল সুপরিকল্পিত কৌশল। এর উদ্দেশ্য শুধু অস্ত্র ধ্বংস নয়, বরং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতি বার্তা দেওয়া যে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক প্রভাব ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা সিরিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল করার একটি প্রচেষ্টা।
সূত্র : আল জাজিরা