গাজা ইস্যুতে মিশরের সিসি সরকারের ভূমিকা বেশ বিতর্কিত। ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর মিশর এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় ছিলো। রাফা সীমান্ত বন্ধ রাখা, মানবিক সাহায্যে জটিলতা, ইসরায়েলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা, এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবাদ দমন—এসব কার্যক্রম সিসি সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
রাফা সীমান্ত বন্ধ
৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে সিসি সরকার রাফা সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেয়। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, ওই পথে ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা। যদিও গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে কায়রো এবং তেল আবিবের মধ্যে সমন্বয় ছিল, কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্তের ফিলিস্তিনি অংশের দখল নিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয়।
আল-আরজানি ফি
গাজার সংকটময় পরিস্থিতি থেকে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে সিসি-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আল-আরজানি। তার মালিকানাধীন কোম্পানি রাফা ও কায়রোর মধ্যে পরিবহন সেবার জন্য ফি নেওয়ার যুক্তি দেখালেও, অনেকে এটিকে মানবিক সংকটকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা বলে সমালোচনা করেন। গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে এসব সমালোচনা আরও তীব্র হয়।
ফিলাডেলফিয়া করিডোর
মিশরীয় কর্মকর্তাদের বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী ফিলাদেলফিয়া করিডোরে অবস্থান নেয়। এটি ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হলেও মিশরের প্রতিক্রিয়া কেবল নিন্দা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকে। কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হয়নি।
ইসরায়েলকে সহযোগিতা
গাজায় যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতার অভিযোগে সিসি সরকার সমালোচিত হয়। এমনকি ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজগুলোকে সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচলের অনুমতি দেওয়া এবং মিশরের বন্দরে অস্ত্রবাহী জাহাজ নোঙরের ঘটনাও ঘটেছে।
ইসরায়েলবিরোধী প্রতিবাদ দমন
গাজায় হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই সিসি সরকার মিশরে ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা সংহতি কর্মসূচি আয়োজন নিষিদ্ধ করে। যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন বন্ধ করতে এবং সংহতি প্রকাশকারী ব্যক্তিদের আটক করতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এতে দেশজুড়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ
গত কয়েক মাসে সিসি বারবার মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি চুক্তির প্রশংসা করেছেন। তিনি এটি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সিসি সরকার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে এগিয়ে যাবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করবে।
সূত্র : রসদ