ইসলাম ইনসাইট

কে এই খালিদ নাবহান, তার মৃত্যু যে কারণে বিশ্ববাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে

কে এই খালিদ নাবহান, তার মৃত্যু যে কারণে বিশ্ববাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে
কে এই খালিদ নাবহান, তার মৃত্যু যে কারণে বিশ্ববাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ছবি : আনাদোলু

গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শহিদ হয়েছেন খালেদ নাবহান। ২০২৩ সালে নাতনি রিমের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে যে মানুষটি ‘রুহের রুহ বা আত্মার আত্মা’ বলে হাহাকার করে আলোচনায় এসেছিলেন, আজ তিনিও ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার হয়ে নাতনি রিমের কাছে চলে গেলেন।

১৬ ডিসেম্বরের ওই হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় তার বাড়ি। ধ্বংসস্তূপ থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হলে শোকের ছায়া নেমে আসে গাজার আকাশে-বাতাসে। খালেদ নাবহান শুধু একজন ব্যক্তি ছিলেন না; তিনি ছিলেন ভালোবাসা, মানবতা ও সংগ্রামের প্রতীক।

রুহের রুহ: পেছনের গল্প

২০২৩ সালের নভেম্বর। ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারায় খালেদ নাবহানের তিন বছর বয়সী নাতনি রিম ও তার ভাই তারেক। রিম ছিল নাবহানের জীবনের আলো। প্রতিদিন তাকে কোলে নিয়ে হাসতেন, খেলতেন। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় এক মুহূর্তে সব শেষ হয়ে যায়।

নাতনির নিথর দেহ হাতে তুলে নিয়ে খালেদ কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, ‘রুহুর রুহ’—আমার আত্মার আত্মা। সেই মুহূর্তটি ধরা পড়ে ক্যামেরায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। এটি গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নতুন করে। পাশাপাশি নাতনির প্রতি একজন দাদার ভালোবাসার আকুতি দেখে বিশ্ববাসী।

পরে এক সাক্ষাৎকারে খালেদ বলেছিলেন, ‘রিম আমার জীবনের আলো ছিল। তার মৃত্যুর পর মনে হয়, সে আমার আত্মার এক অংশ কেড়ে নিয়ে গেছে।’

শোক থেকে শক্তি

রিম ও তারেকের মৃত্যুর পরও খালেদ থেমে থাকেননি। নিজের শোককে শক্তিতে পরিণত করে দাঁড়িয়েছিলেন গাজার মানুষের পাশে। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য খাবার বিতরণ করেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবারগুলোর পাশে থেকে তাদের সাহস জুগিয়েছেন।

নাবহানের একটি ভিডিও বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যেখানে দেখা যায়, তিনি রাস্তায় ঘুরে ক্ষুধার্ত বিড়ালদের খাওয়াচ্ছেন। তার কথায়, ‘এই বিড়ালও আমাদের সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই করে। তাদের সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব।’

নতুন আলোর স্বপ্ন

২০২৩ সালের জুলাই মাসে তার পরিবারে জন্ম নেয় এক নতুন শিশু। তিনি সেই শিশুর নাম রাখেন ‘রুজাদ’, যার অর্থ ফজরের সময়। তিনি বলেছিলেন, ‘রিম চলে গেলেও রুজাদ আমাদের নতুন আলো। এই নামটি রিমের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখবে।’

বিদায়, রিমের কাছে

খালেদ নাবহানের মৃত্যু গাজার মাটি আর মানুষকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তার জানাজায় জনতার ঢল ছিল উপচে পড়া। তারা জানত, তারা কেবল একজন মানুষকেই নয়, বিদায় জানাচ্ছে একটুকরো মানবতাকে।

বিশ্ববাসীর জন্য খালেদ নাবহানের মৃত্যু আরেকটি তীব্র বার্তা। তিনি শুধু একজন পিতামহ ছিলেন না; তিনি ছিলেন গাজার প্রতিটি শিশুর মুখপাত্র, প্রতিটি বাবার সংগ্রামের প্রতীক। তার সেই আর্তনাদ—‘রিম, তুমি ছিলে আমার রুহের রুহ’—আজও বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়, মনে করিয়ে দেয় গাজার প্রতিটি প্রাণই অমূল্য।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore