বহুমুখী চাপে রয়েছে ইরানের শাসনব্যবস্থা। একদিকে দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষত সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর ক্রমশ সংকটাপন্ন অবস্থা ইরানের কৌশলগত অবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইরানের জন্য একটি কৌশলগত সেতু হিসেবে কাজ করেছে। এই পথেই তেহরান লেবাননের হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তবে সিরিয়ার শাসনব্যবস্থার পতন হলে ইরান বড় ধরনের কৌশলগত সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইরানের জাতীয় প্রতিরোধ পরিষদের সদস্য মাহদি আকবায়ি বলেন, ‘সিরিয়ার পতন ইরানকে তাদের ঐতিহাসিক মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।’
সম্প্রতি ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফও স্বীকার করেছেন, ‘সিরিয়ার সরকার পতন ইরানের লজিস্টিক নেটওয়ার্কের জন্য বড় বিপর্যয় তৈরি করবে।’
এদিকে ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোও দুর্বল হয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারে ইরান এসব গোষ্ঠীতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই সহায়তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। লেবাননের হিজবুল্লাহর ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এবং গাজায় হামাসের সংকটও ইরানের কৌশলগত অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
বাল্টিমোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ডিন ইভান সাশা শিহান মনে করেন, ‘প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর দুর্বলতা ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে ইরানের সামগ্রিক কৌশলগত শক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
অন্যদিকে ইরানের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি আরও সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সিরিয়ার যুদ্ধে বিপুল অর্থব্যয় এবং সামরিক হস্তক্ষেপ দেশটির আর্থিক ব্যবস্থা দুর্বল করে ফেলেছে। বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবিতে দেশটিতে একাধিকবার বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব বিক্ষোভ ইরানের শাসনব্যবস্থার জন্য লাল সংকেত।
তবে ইরানি লেখক সাঈদ শাওয়ার্দি মনে করেন, ইরানের সামনে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদেশে ব্যয় করা অর্থ এখন দেশের ভেতরে বিনিয়োগ করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানি শাসনব্যবস্থার পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা বারবার ভিন্ন প্রমাণিত হয়েছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি এই বহুমুখী সংকট সামাল দিতে না পারে, তাহলে শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
আল হুররার একটি একটি আর্টিকেল অবলম্বনে