ইসলাম ইনসাইট

স্বৈরশাসকদের নির্বাসিত জীবন, ইতিহাসের দিকে এক ঝলক

কিভাবে কাটে নির্বাসনে স্বৈরশাসকদের জীবন, ইতিহাসের দিকে এক ঝলক
কিভাবে কাটে নির্বাসনে স্বৈরশাসকদের জীবন, ইতিহাসের দিকে এক ঝলক। ছবি : আরাবি ২১

ইতিহাসে স্বৈরশাসকদের উত্থান-পতনের গল্প সব সময়ই মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। কঠোর শাসন, জনগণের অধিকার হরণ ও নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে অবিচারের নানা নীতিমালা প্রয়োগ করে তারা ক্ষমতার শীর্ষে থাকেন। কিন্তু বিদ্রোহ, আন্তর্জাতিক চাপ কিংবা অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র তাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় নির্বাসনের জীবন—কখনো বিলাসিতায়, কখনো নিঃসঙ্গতায়। চলুন জেনে নিই, ক্ষমতার আসন থেকে নির্বাসনে যাওয়া স্বৈরশাসকদের জীবনের অজানা অধ্যায়।

সিরিয়া: বাশার আল আসাদ

দীর্ঘদিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বাশার আল-আসাদ। জনগণের বিদ্রোহের মুখে ২০২৪ সালে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। এরপর তিনি রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। ভ্লাদিমির পুতিনের সহায়তায় নতুন জীবন শুরু করলেও তাঁর নির্বাসনের জীবন নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা।

বাংলাদেশ: শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত তার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ডিজিটাল অগ্রগতির ভুয়া দাবি করা হয়। তবে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করার অভ্যাস তার শাসনকে কলঙ্কিত করেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তিনি দিল্লি পালিয়ে যান। বর্তমানে নয়াদিল্লির একটি সেফ হাউসে অবস্থান করছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান এখন অনিশ্চিত।

তিউনিসিয়া: জয়নাল-আবিদিন বেন আলি

আরব বসন্তের ঢেউ ২০১১ সালে তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক জয়নাল-আবিদিন বেন আলিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তিনি বিপুল সম্পদ নিয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। যদিও প্রথমে বিলাসবহুল জীবন কাটিয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগে অনুপস্থিত অবস্থায় তার ৩৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০১৯ সালে জেদ্দায় নির্বাসনে তাঁর মৃত্যু হয়।

উগান্ডা: আইডি আমিন

উগান্ডার স্বৈরশাসক আইডি আমিন তার শাসনামলে লক্ষাধিক মানুষ হত্যার জন্য বিতর্কিত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি লিবিয়া ও পরে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। সেখানে সাধারণ জীবনযাপন করে ২০০৩ সালে মৃত্যু হয় তাঁর।

চাদ: হিসেন হাব্রে

১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুত চাদের স্বৈরশাসক হিসেন হাব্রে সেনেগালে পালিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তবে ২০১৬ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২১ সালে কারাগারে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।

হাইতি: জ্যঁ-ক্লদ ডুভালিয়ার

হাইতির একনায়ক জ্যঁ-ক্লদ ডুভালিয়ার ১৯৮৬ সালে বিপুল সম্পদ নিয়ে ফ্রান্সে পালান। প্রথমে বিলাসী জীবন কাটালেও শেষদিকে আর্থিক সংকটে পড়েন। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ২০১৪ সালে পোর্ট-অ-প্রিন্সে তাঁর মৃত্যু হয়।

দক্ষিণ কোরিয়া: সিংমান রি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সিংমান রি ১৯৬০ সালে গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে হাওয়াইতে নির্বাসনে যান। সেখানে দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনের শেষ সময় কাটিয়ে ১৯৬৫ সালে মারা যান।

ফিলিপাইন: ফার্দিনান্দ মার্কোস

১৯৮৬ সালে গণবিক্ষোভের মুখে ফার্দিনান্দ মার্কোস হাওয়াইতে পালান। সেখানকার বিলাসবহুল জীবনে তার স্ত্রী ইমেলডার জুতার সংগ্রহ ছিল আলোচনার বিষয়। ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যু হলেও তার পুত্র ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ২০২২ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হন।

স্বৈরশাসকদের নির্বাসনের জীবন আমাদের দেখায়, ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন যত গৌরবময়, পতন তত নির্মম। বিলাসবহুল জীবন, অনুশোচনা কিংবা নিঃসঙ্গতা—নির্বাসনের জীবন তাদের জন্য বিভ্রান্তিময় অধ্যায় হয়ে ওঠে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের প্রতি অবিচারের পরিণতি যে অনিবার্য, এই গল্পগুলো তারই প্রমাণ।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore