ইসলাম ইনসাইট

সিরিয়ায় পুতিনের স্বার্থ কোন পথে

সিরিয়ায় পুতিনের স্বার্থ কোন পথে
সিরিয়ায় পুতিনের স্বার্থ কোন পথে। ছবি : ইনাব বালাদি

গৃহযুদ্ধ চলাকালে বাশার আল-আসাদের পাশে দাঁড়িয়ে রাশিয়া সামরিক সহায়তার মাধ্যমে সিরিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছিল। এর বিনিময়ে তারা সিরিয়ায় কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছে। তবে আসাদ সরকারের পতনের পর রাশিয়ার এসব চুক্তি ও সামরিক ঘাঁটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

আসাদের ক্ষমতায় রাশিয়ার ভূমিকা

২০১৫ সালে সিরিয়ার যুদ্ধে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে রাশিয়া। এর প্রতিদানে রাশিয়া সিরিয়ার সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তি করে।

টার্টুস বন্দরের চুক্তি

২০১৯ সালে রাশিয়ার কোম্পানি স্ট্রোই ট্রান্স গ্যাস (STG) সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর টার্টুস পরিচালনার জন্য ৪৯ বছরের চুক্তি করে। এই বন্দরের আয় থেকে রাশিয়া ৬৫% পাবে এবং তা করমুক্ত থাকবে।

ফসফেট খনির নিয়ন্ত্রণ

২০১৮ সালে সিরিয়ার পালমিরায় অবস্থিত ফসফেট খনি থেকে বার্ষিক ২.২ মিলিয়ন টন ফসফেট উত্তোলনের জন্য রাশিয়া ৫০ বছরের চুক্তি করে। ফসফেট সিরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

সার কারখানার চুক্তি

হোমস শহরে অবস্থিত তিনটি বড় সার কারখানা পরিচালনার জন্য রাশিয়া ৪০ বছরের চুক্তি করে।

সামরিক ঘাঁটির ভবিষ্যৎ

রাশিয়া ২০১৫ সালে সিরিয়ার লাতাকিয়ায় হামেইম বিমানঘাঁটি ও টার্টুসে নৌঘাঁটি স্থাপন করে।

হামেইম বিমানঘাঁটি সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিচালনার কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

টার্টুস নৌঘাঁটি রাশিয়ার ভূমধ্যসাগরের একমাত্র সামরিক ঘাঁটি। ২০১৭ সালে আসাদ সরকার রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে, যার আওতায় ২০৬৬ সাল পর্যন্ত এই ঘাঁটিগুলো ব্যবহারের অধিকার পায় রাশিয়া।

নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ

আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় নতুন প্রশাসন ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে।

নতুন প্রশাসন জানিয়েছে, তারা পারস্পরিক সম্মান ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে রাশিয়াসহ সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তবে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও চুক্তি নিয়ে এখনও কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়নি।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার একধরনের মৌন সমঝোতা রয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার ঘাঁটিগুলো আপাতত আক্রমণমুক্ত থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে এই সমঝোতা টিকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

চুক্তিগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

আসাদ সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তিগুলো দীর্ঘমেয়াদি এবং কঠোর শর্তযুক্ত। টার্টুস বন্দরের চুক্তি বাতিল করতে হলে নতুন প্রশাসনকে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি চুক্তিগুলো জাতীয় নিরাপত্তা বা জনগণের স্বার্থবিরোধী প্রমাণিত হয়, তাহলে সেগুলো বাতিল করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন

‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা কঠিন হবে। স্থানীয় প্রতিরোধ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাশিয়ার অবস্থান দুর্বল হতে পারে।

সিরিয়ার নতুন প্রশাসন জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বললেও রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কীভাবে এগোবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

সিরিয়ায় রাশিয়ার অর্থনৈতিক চুক্তি ও সামরিক ঘাঁটিগুলো টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।

আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় রাশিয়ার স্বার্থ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore