হিমস— যাকে ইংরেজিতে হোমস বলে। নানা কারণে সিরিয়াসহ পুরো মুসলিমদের কাছে এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ এবং আবেগের অনুসঙ্গ। হিমসে সমাহিত আছেন মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ রাযি.। আজ বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে চলুন এক চুমুকে জেনে আসি হিমসকে, হিমসের মাটি ও ইতিহাসকে।
সিরিয়ার অরন্তেস (নাহর আল আসি) নদীর তীরে অবস্থিত হিমস শহরের মোট আয়তন ৪৩.৬ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা দেশের মোট আয়তনের ২৩ শতাংশ। এটি দামেশক থেকে ১৬২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শহরটি সিরিয়ার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর—তরতুস, দেইর আল-জোর, হামা, রাক্কা, এবং প্রতিবেশী দেশ ইরাকের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রায় ১৫ লক্ষ জনসংখ্যা নিয়ে এটি সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর।
প্রাচীন গ্রিক যুগে প্রতিষ্ঠিত হিমসের নাম ছিল ‘এমিসা’। পরবর্তীতে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে সমৃদ্ধি লাভ করে। বাইজেন্টাইন, আরব এবং অন্যান্য শক্তির সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই শহর সপ্তম শতকে মুসলিম শাসনের অধীনে আসে।
মুসলিম আরব সেনানায়ক খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাযি. ৭ম শতকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকা হিমসসহ সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো জয় করেন। তাঁর অসামান্য সামরিক দক্ষতার জন্যই শহরটি মুসলিম শাসনের আওতায় আসে। পরবর্তীতে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ জীবনের শেষ দিনগুলো এখানেই কাটান।
হিমস শহরে অবস্থিত ‘মসজিদ খালিদ ইবনে ওয়ালিদ’ শহরটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় নিদর্শন। ইসলামের এই মহান সেনাপতির স্মৃতিকে সম্মান জানাতে নির্মিত মসজিদটির অভ্যন্তরে খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে সমাহিত করা হয়েছে। এটি মুসলিম বিশ্বে বিশেষ গুরুত্ববহ একটি স্থাপনা। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটি পরিদর্শনে আসে। দেখে, প্রাণ জুড়ায়।
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে হিমস শহরটি প্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে আসাদ সরকারের কঠোর দমন-পীড়ন একসময় সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়। বিদ্রোহী এলাকাগুলো প্রায় দুই বছর সরকারী অবরোধের মুখে ছিল। ২০১৭ সালে শহরটি পুনর্দখল করে আসাদ সরকার, তবে বিদ্রোহীদের লড়াই পুরোপুরি শেষ হয়নি তখনও।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীরা হিমসের গ্রামাঞ্চল পুনর্দখল করে এবং শহরের উপকণ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এর ফলে হিমস আবারও আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।
হিমস শুধুমাত্র একটি শহর নয়; এটি বহু ইতিহাসের সাক্ষী। ইসলামের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদের নামের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় এটি মুসলিম বিশ্বের কাছে অমূল্য একটি স্থান। ভৌগোলিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একে আন্তর্জাতিকভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
সূত্র : আল জাজিরা