ইসলাম ইনসাইট

আসাদের পতন থেকে আমরা যা শিখতে পারি

আসাদের পতন থেকে আমরা যা শিখতে পারি
আসাদের পতন থেকে আমরা যা শিখতে পারি। ছবি : আল জাজিরা

সিরিয়ার রাজধানী দামেশকসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বাশার আল-আসাদের পতনে উচ্ছ্বসিত মানুষদের চিত্র আমাদের সবাইকে আপ্লুত করেছে। আরব বিশ্বে স্বৈরতন্ত্রের ভারে পিষ্ট কোটি মানুষের জন্য এ পতন আশার বার্তা হতে পারে। আশায় বুক বাঁধতে পারে তারাও— স্বাধীনতা বেশি দূরে নয়।

কিন্তু ইতিহাস কি ভিন্ন কিছু বলে ? আমরা ইরাক ও লিবিয়ার উদাহরণ দেখেছি, যেখানে শাসকের পতন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বদলে আরও বড় সংকট নিয়ে এসেছে। প্রশ্ন হলো, আসাদের পতন কি সিরিয়ার জন্য শান্তির দুয়ার খুলবে, নাকি এর দ্বারা উন্মুক্ত হবে বিপদের নতুন দুয়ার ?

মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে শাসকের পতনের নজির অনেক রয়েছে। সাদ্দাম হোসেন, আলী আবদুল্লাহ সালেহ, মুয়াম্মার গাদ্দাফি কিংবা ওমর আল-বশির—তাদের পতন যেমন ঘটেছে, তেমনি এসব দেশে জনগণের অবস্থাও দিন দিন আরও শোচনীয় হয়েছে।

শাসকের পতনের পর রাজনৈতিক শূন্যতা কেবল বৈদেশিক হস্তক্ষেপের পথ খুলে দেয়। ২০১৭ সালে গবেষক মন্টি জি মার্শালের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক শূন্যতা বিদেশি শক্তিকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সুযোগ করে দেয়। সিরিয়ার ক্ষেত্রে এমন হস্তক্ষেপ আরও প্রকট। যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ইরানের মতো শক্তিগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে সিরিয়ার সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

শাসকের পতন মানেই বিপ্লবের সফলতা নয়। প্রকৃত সফলতার জন্য দরকার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, যা বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যাকে গ্রহণযোগ্যতার জায়গা দেবে। তবে সিরিয়ার মতো দেশগুলোতে এর অভাব স্পষ্ট। স্বাধীন রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি, শিক্ষায় বিনিয়োগ, এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।

বাশার আল-আসাদের পতন হয়তো সাময়িক আনন্দ নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। সিরিয়ার জনগণের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—একটি সমন্বিত ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। তবে বর্তমান বাস্তবতা বলছে, এই পথটি সহজ নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘাটতি, দুর্বল প্রতিষ্ঠান, এবং বহিরাগত শক্তির প্রভাব—সব মিলিয়ে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।

সিরিয়ার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। দমননীতি এবং শোষণের মাধ্যমে টিকে থাকা কোনো শাসনব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। জনগণের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করা এবং দমন চালিয়ে যাওয়া কেবল বাইরের শক্তিকে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়।

সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা শুধু এই অঞ্চলের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আসাদের পতন হয়তো এক নতুন যুগের সূচনা করবে, কিন্তু কতটা সম্ভব হবে তা সময়ই বলে দেবে।


Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore