ইসলাম ইনসাইট

আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনের ধারাবাহিক ইতিহাস (২য় পর্ব)

 

১৮২৬ সালে ব্রিটিশরা বার্মা দখলে নেয়ার পর আরাকান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পরে। এরপর বার্মাকে ইংরেজরা স্বায়ত্তশাসন দেয়, ফলে বহু রোহিঙ্গা মুসলিম আরাকানে ফিরে আসে। ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আরাকানিদের চাষবাসের সুযোগ – সুবিধা দিয়ে তাদেরকে বশে আনা, যাতে পরবর্তীতে তাদের উপর জুলুম নির্যাতন চালানো যায়। পুরো বার্মাতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরির পর মগদের সহায়তায় ব্রিটিশরা রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে।

 

১৯৩০ সালে বার্মাতে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন শুরু হয়। বার্মার কট্টরপন্থী মগরা প্রচার করে, “আরাকানি মুসলমানদের আদি বাসস্থান হচ্ছে বাংলায়, ইংরেজদের ছত্রছায়ায় আরাকানি মুসলমানরা ওখানে বসবাস করছে।”  অর্থাৎ, বার্মার মগদের ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন ও আরাকান থেকে মুসলিম খেদাও আন্দোলন একই সুরে বাজতে শুরু করলো এই জাতীয়তাবাদী স্লোগানে।

 

১৯৩৭ সালে বার্মাকে ভারত থেকে আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে আনা হয়। তখন ভারতে জোরদার গতিতে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন চলছিলো। এমন সময়ে ব্রিটিশরা বার্মাকে ভারত থেকে আলাদা করে দিয়ে মগদেরকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়। ফলে আবারো রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চলে। এই গণহত্যার ফলে রোহিঙ্গা জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়, ঠিক বর্তমানে উইঘুর মুসলিমদের মতো।

 

১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মার দখল জাপানের হাতে চলে গেলে তখন আবার ব্যাপকহারে মুসলিম গণহত্যা শুরু হয়। ১৯৪২ সালের ২৩ শে মার্চ জাপান আরাকানের আকিয়াব শহরে বোমা বর্ষণ করে। জাপানি যুদ্ধ বিমানগুলি যথাক্রমে ২৪ ও ২৭ শে মার্চ আকিয়াবে পুনরায় বোমা বর্ষণ করে। তাই ব্রিটিশ প্রশাসন ১৯৪২ সালের মার্চের শেষের দিকে আকিয়াব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। ঐ এলাকা থেকে ব্রিটিশ সেনা প্রত্যাহারের পর আরাকানের প্রশাসনিক পদগুলোতে শুন্যতা দেখা দেয়। বো রাং অং এর নেতৃত্বে বার্মা ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (বিআইএ) এর সাথে যোগসাজশ করে মগসন্ত্রাসীরা প্রায় ১,০০,০০০ নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালায়। ৩০০ মুসলিম গ্রামকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

 

চট্রগ্রামে তখন ২২-২৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় নেয়। পরে আরো ৪০ হাজার রোহিঙ্গা চট্রগ্রামে চলে আসে। তারা বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে আশা করছিলো যে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো। অর্থাৎ তাদের ভূমি ইসলামের শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করবো। তখন বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য জিহাদ করা ফরজে আইন হয়ে যায় ! কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক আমরা তখন সে দায়িত্ব পালন করি নি।

 

২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পরও আমরা তাদের সন্ত্রাসী, ইয়াবাখোর বলে প্রচার করি, এখনো করে যাচ্ছি !!

 

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। এরপরও আরাকান মায়ানমারের অধীনে ছিল। ৪৭ এ দেশভাগের সময় জোরপূর্বক উপমহাদেশের অনেক মুসলিম রাজ্য যেমন বিহার, আসাম, উত্তর প্রদেশকে ভারতের অধীনে রেখে দেয় ব্রিটিশরা। এর মানে কাফির মুশরিকরা কখনোই আমাদের বন্ধু নয়, তারা কখনোই আমাদের ভালো চায়নি। দিনশেষে তারা নিজেরা একে অপরের আদর্শিক বন্ধু।

 

(আগামী পর্বে সমাপ্ত)

 

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore