ইসলাম ইনসাইট

চেঙ্গিস খান ও তার রক্তপিপাসু তাতারি বাহিনীর উত্থানের ইতিহাস

 

তাতার! বিদঘুটে এই নামটির সাথেই মিশে আছে লাখ লাখ মুসলিম শহীদদের রক্ত। বর্তমান চীন দেশের মঙ্গোলিয়ায় তেমুজিন নামে ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু এক সমরনায়কের আবির্ভাব ঘটে। যাকে চেঙ্গিস খান নামে জানে পুরো পৃথিবী।

 

এই চেঙ্গিস খান এমন একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিল, যারা নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো পৃথিবীবাসীকেই। মানুষ হত্যা করা ছিল যাদের কাছে নিছক খেলতামাশা। তাই তো ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও নির্দয় জাতি হিসেবে পুরো পৃথিবী জুড়ে কুখ্যাতি ছিল এই তাতারিদের। তাদেরকে নিয়েই আমাদের আজকের এপিসোড।

 

অথচ সেসময় পৃথিবীতে ছিল কেবল দুটি পরাশক্তি ছিল। একদিকে ছিল বিশ্বব্যাপী বিজয়ী হিসেবে ছড়িয়ে পড়া মুসলিমশক্তি, আর অপরটি ছিল পরাজিত ও ক্ষয়িষ্ণু খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত ক্রুসেড শক্তি।

 

পৃথিবীতে এমন দুটি পরাশক্তির অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও, কিভাবে তাতারীদের এমন উত্থান ঘটেছিল? কি এমন বৈশিষ্ট্য ছিল, যা তাদের মতো একটি অপরিচিত ও ক্ষুদ্র জাতিকে তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম প্রধান পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছিল? মূলত এর পেছনে ছিল তাতারিদের নৃশংস যুদ্ধনীতি, ধারাবাহিক যোগ্য নেতৃত্ব এবং মুসলিমদের মাঝে থাকা ভয়াবহ অনৈক্য এবং তাদের জিহাদ বিমুখতা।

 

তাতারিদের মহানায়ক চেঙ্গিস খান যেমন ছিল একজন রাষ্ট্রপ্রধান, ঠিক তেমনি ছিল একজন দুর্ধর্ষ সমরবিদ ও যোদ্ধা। তার সুনিপুণ সমরদক্ষতা, রণকৌশল, যুদ্ধকালীন রাজনীতি এবং শত্রুর দুর্বলতাকে নিখুঁতভাবে কাজে লাগানোর যোগ্যতাই চেঙ্গিস খানকে করেছিল তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম প্রধান বিজয়ী জেনারেল।

 

ইতিহাস সাক্ষী দেয়, চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বাধীন তাতারীরা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে নৃশংস এক জাতি। দয়া-মায়া নামক কোন শব্দ যাদের অভিধানে ছিল না। তারা যে অঞ্চলেই যুদ্ধ করতো, সেখানকার মানুষের মাঝে ভয় ও ভীতির প্লাবন বইয়ে দিত। এক্ষেত্রে তারা ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ, জালিম ও মাজলুমদের মাঝে কোন পার্থক্য করত না।

 

তাতারিরা যখন কোনো শহরে প্রবেশ করতো, তখন তারা গোটা শহর তো ধ্বংস করতোই, সেই সাথে সেখানকার সকল অধিবাসীদেরও নৃশংসভাবে হত্যা করতো। যে কারণে তাতারিদের অধিকাংশ প্রতিপক্ষ বুঝে উঠতেই পারতো না যে, তারা কি সিদ্ধান্ত নিবে। তারা তাতারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে নাকি পালিয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাবে।

 

এছাড়াও তাতারিদের আরেকটি যুদ্ধনীতি ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। তারা যখন কোন অঞ্চল দখল করতো, সেখানকার কিছু অধিবাসীকে হত্যা না করে বন্দী করতো এবং সেসব বন্দীদের সাথে নিয়ে তাদের টার্গেটকৃত পরবর্তী অঞ্চল জয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হত। কেউ যদি যাত্রাপথে দুর্বল হয়ে হাঁটতে না পারতো, তাতারিরা তাকে হত্যা করে ফেলতো।

 

এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তৈরি হয় যে, তাতারীরা তো যুদ্ধ ক্ষেত্রে ও যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করতো। তাহলে কেন তারা বন্দীদের সঙ্গে নিল? ইতিহাস থেকে তাদের এই কৌশল গ্রহণের ৫টি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়…

 

১। তারা বন্দীদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ১০জনকে দলে দলে ভাগ করে, প্রতিটি দলকে তারা তাতারিদের পতাকা ধরিয়ে দিত। যাতে করে দূর থেকে বুঝা যায় এরাও তাতারীদের দলভুক্ত। এছাড়াও শত্রুবাহিনী যাতে করে তাতারিদের বিপুলসংখ্যক যুদ্ধ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে।

 

২। তাতারিরা যুদ্ধ বন্দীদেরকে শত্রুদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য করত। কেউ যুদ্ধ করতে অস্বীকার করলে কিংবা কারও মাঝে যুদ্ধ করার মতো শক্তি না থাকলে তারা তাকে হত্যা করে ফেলত।

 

৩। তাতারীরা বন্দীদের তাদের রণক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে বন্দীদের ব্যবহার করত। বন্দীদেরকে তারা প্রথম কাতারে দাঁড় করাত আর পেছনে তারা নিজেরা আত্মরক্ষা করত। বন্দীদের পেছন থেকে তারা শত্রুদের উপর তীর ও বর্শা নিক্ষেপ করত।

 

৪। আর যদি তারা কোন শহরকে অবরোধ করতো, তখন তারা উক্ত শহরের প্রধান ফটকগুলোতে উপস্থিত জনতার সামনেই সকল বন্দীদের হত্যা করে ফেলতো। যাতে করে শত্রুদের অন্তরে ভয়াবহ ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

 

৫। শেষ কারণটি ছিল – বিভিন্ন ফ্রন্টে বন্দী হওয়া তাতারী সৈন্যদের মুক্ত করার উদ্দেশ্যে তাতারিরা তাদের হাতে থাকা বন্দীদেরকে সাথে নিয়ে যেত। তবে এমনটা খুব কমই ঘটেছে।

 

তাতারিদের এসকল ভয়ঙ্কর যুদ্ধনীতির কারণেই কোন জাতি তাতারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এক কদম এগিয়ে আসলে তিন কদম পিছিয়ে যেত। এক কথায় তাতারিরা তৎকালীন সময়ে পুরো পৃথিবী জুড়েই এক ভয়াবহ ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চেঙ্গিস খান যত দক্ষ সমরবিদ হোক না কেন। তৎকালীন সময়ের সুপার পাওয়ার মুসলিমদের তুলনায় অতি ছোট একটি বাহিনী নিয়ে মুসলিমদের সুবিশাল সালতানাত গুলোকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া কি খুবই সহজ কাজ ছিল? নিশ্চয়ই না! তাহলে কি মুসলিমদেরও এমন কিছু বড় ভুল ছিল? যেসব ভুলের মাশুল দিতে হয়েছিল আমাদের প্রিয় খিলাফাত ও সালতানাত গুলোকে বিসর্জন দিয়ে!

 

ইতিহাসের সেই পাতা গুলো থেকে ঘুরে আসতে ইসলাম ইনসাইটের সাথেই থাকুন।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore