ইসলাম ইনসাইট

একনজরে ইমামুল মুজাহিদীন শাইখ ইয়াহইয়া সিনওয়ার রহিমাহুল্লাহর জীবনী

শাইখ ইয়াহইয়া সিনওয়ার

শহীদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার রহঃ ১৯৬২ সালের ১৯ অক্টোবর দক্ষিণ গাযা উপত্যকার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে দখলদার ইসরাইলের তাণ্ডব দেখে আর শরণার্থী জীবনের কষ্ট উপভোগ করে। গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে আরবী সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি নেবার পর হামাসের সক্রিয় কাজ করা অবস্থায় গ্রেফতার হোন। ২০১১ সালে মুক্তি পাবার পর নভেম্বর মাসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন।

 

ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

ছাত্রজীবনে সিনওয়ার রহঃ একটি ইসলামী ছাত্রসংগঠনের সদস্য হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই সংগঠনটির গাযার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির শাখার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হোন। ছাত্রজীবনে সংগঠনে কাজ করার অভিজ্ঞতাই তাকে হামাসের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলে। ১৯৮৬ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শাইখ আহমদ ইয়াসিন রহঃ এর তত্ত্বাবধানে খালেদ আল-হিন্দি এবং রাউহি মুশতাহার সাথে প্রতিষ্ঠা করেন মানজামাতুল জিহাদ ওয়া দাওয়াহ্ নামে পরিচিত একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সংক্ষেপে এর নাম দেয়া হয় “মাজদ”।

 

বন্দীজীবন

ছাত্রসংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কারণে তিনি ১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন এবং ৪ মাস কারাগারে বন্দী থাকেন। মুক্তির এক সপ্তাহ পর তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় এবং বিনা বিচারে ৬ মাস কারাগারে বন্দী থাকেন। ১৯৮৫ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হোন এবং তাকে ৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।২০ জানুয়ারী, ১৯৮৮ সালে দুই ইসরাইলী সৈন্যকে অপহরণ ও হত্যার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তাকেসহ ৪ জন হামাস সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তিনি কারাগারে হামাসের বন্দীদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং কারাগারে একের পর এক অনশন, ধর্মঘট পরিচালনা করেন।

 

নেতা ও লেখক হিসেবে ভুমিকাপালন

কারাগারে বন্দী থাকাবস্থায় তিনি হিব্রু ভাষা শিখেছিলেন এবং সন্ত্রাসী ইসরাইলের মানসিকতা বুঝতে পেরেছিলেন। সেইসাথে অনেক বই,উপন্যাসও লিখে ফেলেন। তার উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে কারমি গিলনের শিন বেট এমং দ্য পিসেস,ইসরাইল পার্টিস,ক্লোভ থর্নস,হামাস: ট্রায়াল অ্যান্ড এরর এবং গ্লোরি ব্যাপকভাবে পরিচিত। তার একটি অসাধারণ গুণাবলী ছিল তাহলো তথ্য লুকানো। বন্দী থাকাবস্থায় সন্ত্রাসী ইসরাইল তার কাছ থেকে বহুবার চেষ্টা করেও হামাসের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে পারেনি।

 

রাজনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা

দীর্ঘ বিশ বছর কারাবরণের পর ২০১১ সালে মুক্তি পান সিনওয়ার রহঃ মুক্তি পাওয়ার পর পরই হামাসে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ২০১২ সালে তিনি হামাসের পলিটিকাল ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হোন। পরবর্তীতে তিনি হামাসের সামরিক শাখা ইজুদ্দিন আল – কাসসাম ব্রিগেডের দায়িত্ব নেন। তিনি আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরো এবং ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ সালে তিনি শহীদ ইসমাইল হানিয়াহর উত্তরসূরি হয়ে গাযা উপত্যকায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন।ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে বিভক্তির অবসান ঘটাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে চার বছরের জন্য গাযার হামাস আন্দোলনের প্রধান নির্বাচিত হন।

 

তুফানুল আকসার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড

সামরিক শাখার প্রধান মুহাম্মদ আল-দেইফ হাফিঃ সাথে “তুফানুল আকসা” যুদ্ধের পরিকল্পনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন সিনওয়ার রহঃ। ফলে তুফানুল আকসা সংগঠিত হবার পর তিনি দখলদারের মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি হয়ে ওঠেন এবং তার হত্যাই ছিল গাযা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত লক্ষ্য।

গাযায় বন্দি থাকা কয়েকজন ইসরাইলের সাথেও দেখা করেছিলেন। ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে নেতানিয়াহু ঘোষণা  করে যে তার বাহিনী সিনওয়ারের বাড়ি ঘিরে রেখেছে, কিন্তু তার কাছে পৌঁছানো যায়নি। চলতি বছরের ৬ ই আগস্ট ইসমাইল হানিয়াহের উত্তরসূরি হিসেবে তিনি হামাসের প্রধান নির্বাচিত হন। অক্টোবরের ১৭ তারিখে সন্ত্রাসী ইসরাইলের সাথে এক বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে তিনি শাহাদাতবরণ করেন।

দুই বিলিয়ন মুসলিমের সম্মান রক্ষায় ডানহাতসহ পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বামহাতে লাঠি নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। রাহিমাকাল্লাহু ইয়া আবা ইবরাহীম! আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা তাকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore