১৩ জুলাই ১৯৩১ – এই দিনটি কাশ্মীরের মুসলমানদের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। এসময় শ্রীনগরের কেন্দ্রীয় জেলখানার সামনে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মুসলমান। কারণ একজন ধর্মপ্রাণ বক্তা শেখ আব্দুল কাদিরকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করেছিল তৎকালীন ডোগরা রাজা হরি সিং। এই ডোগরা শাসক ছিলেন কাশ্মীরের এক জালিম হিন্দু রাজা যে ব্রিটিশদের সমর্থনে মুসলমানদের ওপর দমননীতি চালাতো।
সেসময় কারাগারের সামনে উপস্থিত মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন। তখন তাদের মধ্যে অনেকেই দাঁড়িয়ে আজান দিতে শুরু করেন, কিন্তু এটি ইংরেজদের দালালদের সহ্য হয়নি। ঠিক তখনই ডোগরা সেনারা গুলি চালায়। একে একে ২২ জন মুসলমান যুবক শহীদ হন কিন্তু আজান থেমে যায়নি। একজন গুলিতে পড়ে গেলে, আরেকজন দাঁড়িয়ে বাকি আজান শেষ করতেন। আল্লাহু আকবার!
এই আজান কেবল নামাজের ডাক নয়, এটি ছিল মুসলমানদের পক্ষ থেকে এক ঈমানী ঘোষণা জুলুম যতই হোক, মুসলিমরা মাথা নত করবে না। ২২ জন শহীদের রক্তে লেখা হয়েছিল সেই বার্তা যা আজও কাশ্মীরে গর্ব করে স্মরণ করা হয়।
আজও কাশ্মীরের মুসলিমরা হিন্দুত্ববাদী ভারতের দ্বারা নির্যাতিত। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কাঠামো সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নেয় যা মূলত অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তি ছিল। এরপর থেকে কাশ্মীর পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত অঞ্চলে, যেখানে রয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, গণগ্রেফতার, রাজনৈতিক নেতাদের বন্দিত্ব এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ যার সবকিছু করা হচ্ছে দিল্লির ইশারায়।
এই বাস্তবতায়, ১৩ জুলাই কেবল একটি অতীতস্মৃতি নয় এটি আজও একটি জীবন্ত আন্দোলনের প্রতীক যা স্মরণ করিয়ে দেয়: কাশ্মীর হিন্দুত্ববাদী প্রশাসনের দখলে থাকার জন্য নয়। পূর্বে যেমন তারা স্বাধীনতার জন্য হিন্দুত্ববাদী ডোগরা রাজা হরি সিংয়ের বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছিল আজও তারা এই উগ্র বিজেপি প্রশাসনের দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনে একই রকম আত্মত্যাগে পিছপা হবে না।