সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে HTS (হায়াত তাহরির আল শাম) মুজাহিদীনদের অভিযানের মাধ্যমে জালিম বাশার আল-আসাদের সিরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়ে গিয়েছে। সিরিয়ার এ মুক্তি শুধু স্থানীয় জনগণের জন্য নয়, বরং ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে একটি বড় কৌশলগত পথ খুলে দিয়েছে। আসাদের পতন শুধু একজন জালিমের পরাজয় নয়; এটি ফিলিস্তিনের মুজাহিদীনদের জন্য একটি বড় বিজয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। তবে এই সংগ্রাম এখানেই শেষ নয়। মিশর এবং জর্ডানের জালিম শাসকদের পতন ফিলিস্তিন ও আল আকসার মুক্তির জন্য আরও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
মিশর ও জর্ডান: ফিলিস্তিন মুক্তির পথে কৌশলগত প্রতিবন্ধক
মিশরের আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি এবং জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহ – এই দুই শাসক দখলদার ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর সহযোগিতায় ফিলিস্তিন ইস্যুকে দীর্ঘায়িত করছে।
মিশরীয় বর্ডার ও গাজার ভূরাজনীতি
মিশরের সিনাই অঞ্চলের বর্ডার গাজার জন্য লাইফলাইনের মতো। গাজার প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রাফা ক্রসিং দিয়ে মিশরের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সিসির শাসনামলে এই রাফা ক্রসিং উল্টো সন্ত্রাসী ইসরাইলের অবরোধের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। মিশর যদি বিপ্লবীদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তবে গাজার উপর থেকে পশ্চিমা ও জায়নবাদীদের অবরোধ ভেঙে দেওয়া সহজ হবে। অস্ত্র, খাদ্য এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে গাজার প্রতিরোধ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করা যাবে।
জর্ডানের পশ্চিম তীর বর্ডার
জর্ডান, যার পশ্চিম সীমান্ত ১৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ঘিরে রেখেছে। এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের জন্য সরাসরি সাহায্য পৌঁছানোর পথ। রাজা আব্দুল্লাহর সরকার বরাবরই ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করেছে। জর্ডানের পতন মানে পশ্চিম তীরের প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য নতুন জীবন।
–ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তির সাথে আঁতাত
মিশর এবং জর্ডানের শাসকরা ইসরাইলের সঙ্গে কৌশলগত আঁতাত করেছে। আল ফাত্তাহ আল সিসি ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা জোরদার করেছে। অন্যদিকে, জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহ ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইসরাইলের নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব
তুরস্কসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর উচিত এই দুই দেশকে তাদের জালিম শাসকদের হাত থেকে মুক্ত করতে কৌশলগত সমর্থন দেওয়া। সিরিয়ার মুক্ত অঞ্চলের সঙ্গে মিশর ও জর্ডানের সীমান্ত সংযুক্ত হলে ফিলিস্তিনের ভেতরে প্রবেশ করা সহজ হবে।
ফিলিস্তিন মুক্তির সম্ভাবনা: ভূরাজনীতির বিশ্লেষণ
১. সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ: মিশরের রাফা ক্রসিং ও সিনাই অঞ্চল এবং জর্ডানের পশ্চিম তীর বর্ডার মুজাহিদীনদের দখলে এলে ফিলিস্তিনে সরাসরি সাহায্য পৌঁছানো সহজ হবে।
২. জিহাদের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি: মিশর ও জর্ডানের শাসকদের পতন হলে এই অঞ্চলগুলো নতুন কৌশলগত জিহাদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
৩. আন্তর্জাতিক প্রভাব: এই অঞ্চলের মুক্তি বিশ্ব মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক হতে পারে যা পশ্চিমা শক্তির আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করবে।
সিরিয়ার মুক্তি যেমন আশার আলো দেখিয়েছে, তেমনি মিশর ও জর্ডানের জালিম শাসকদের পতন ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের অপরিহার্য অংশ। একটি মাত্র পথ খোলার ফলে যেমন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ শক্তি বেড়েছে, তেমনি দুই বড় কৌশলগত বর্ডার যদি মুক্ত হয়, তবে ফিলিস্তিন ও আল আকসার মুক্তির স্বপ্ন আর বেশি দূরে থাকবে না।
আল্লাহর কাছে এখন সকল দ্বীন প্রিয় মুসলিমদের এই দোয়া, মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিরিয়ার মতো এই দুই জালিম শাসকের পতন ঘটাতে পারে। সময় এসেছে ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসার মুক্তির নতুন ইতিহাস লেখার।