২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ৭২টি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ছিল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়া। এই বছরটি একদিকে নির্বাচনের জন্য স্মরণীয় হলেও, বাংলাদেশ ও সিরিয়ার ক্ষেত্রে এটি পরিণত হয়েছে স্বৈরাচার পতনের ইতিহাসে।
বাংলাদেশ: হাসিনার পতন
বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল খুনি হাসিনার অধীনে টানা তৃতীয়বারের বিতর্কিত নির্বাচন। জনগণের অসন্তোষ ধীরে ধীরে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় জুলাইয়ে একটি শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে। কিন্তু আন্দোলন দমন করার চেষ্টা দ্রুতই সরকারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
৫ আগস্ট লাখো মানুষ যখন রাজধানী ঢাকার পথে গনভবনের দিকে অগ্রসর হয়, তখন হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। তার ১৫ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটে, যা মুজিব পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাবের শেষ সূচনা করে।
সিরিয়া: আসাদের বিদায়
বাংলাদেশের পতনের কয়েক মাস পর, ২৪ বছরের শাসনের অবসানে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদও দেশ ছেড়ে পালান। ২০১১ সালে আরব বসন্ত থেকে শুরু করে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত আসাদের শাসন ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার এবং লাখো মানুষের মৃত্যুর কারণে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত।
সম্প্রতি,২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ফ্রান্স আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আজ যখন HTS মুজাহিদীনরা দামেস্কে প্রবেশ করে, আসাদ রাশিয়ার আশ্রয়ে পালিয়ে যান।
মুজিব ও আসাদ পরিবারের পতন: একটি যুগের সমাপ্তি
খুনি হাসিনা ও বাশার আল-আসাদের পতন শুধু তাদের স্বৈরাচারী শাসনের শেষ নয়, বরং তাদের পারিবারিক রাজনীতিরও সমাপ্তি। হাসিনার পালানোর পর মুজিব পরিবারের প্রতীকগুলোর ওপর আক্রমণ হয়। একইভাবে, সিরিয়ায় বাশারের বাবা হাফিজ আল-আসাদের মূর্তি সিরিয়ার সাধারণ জনতা ভেঙে ফেলে, আসাদ রাজবংশের অবসান ঘটায়।
বাংলাদেশ ও সিরিয়া: ভিন্ন পথ, অভিন্ন পরিণতি
বাংলাদেশ ও সিরিয়া, দুটি দেশ ভিন্ন হলেও, তাদের অভিজ্ঞতায় একটি বড় মিল রয়েছে। উভয় দেশেরই স্বৈরশাসকরা দুর্নীতি ও পরিবার তন্ত্রের মাধ্যমে দেশের কাঠামোকে ধ্বংস করেছে, জনগণের কণ্ঠস্বর দমন করেছে। তবে, বিদ্রোহী জনগণ তাদের পতনের পথ তৈরি করেছে।
এইসব ঘটনা আমাদের শিখায় যে ইসলাম বিদ্বেষী স্বৈরাচারীদের শাসন যত দীর্ঘই হোক না কেন তাদের পতন অনিবার্য।