ইসলাম ইনসাইট

পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি ও ভারতের নতুন ফাঁদ

বাংলাদেশের দিকে এখন যে ভয়ংকর হুমকি ধেয়ে আসছে, তা আর কেবল সীমান্তের সমস্যা নয়—এটি সরাসরি একটি পূর্ণাঙ্গ স্ট্র্যাটেজিক ইনসারজেন্সি (কৌশলগত সন্ত্রাসী বিদ্রোহ) গঠনের প্রক্রিয়া ও সার্বভৌমত্বের উপর ভয়াবহ আঘাত।

গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট খুনি হাসিনার পতনের পর ভারতের স্ট্র্যাটেজিক নেটওয়ার্ক বিকল্প প্রক্সি তৈরির প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি (Arakan Army), যারা বাংলাদেশের ভেতর JSS (Parbatya Chattagram Jana Samhati Samiti), UPDF (United People’s Democratic Front), এবং অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাথে মিলিত হয়ে একটি সুসংগঠিত এথনিক কোয়ালিশন (জাতিগত জোট) গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য স্পষ্ট—পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং আরাকান অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সরাসরি প্রশ্রয় ও লজিস্টিক্যাল সাপোর্টে এখন এই কোয়ালিশন একটি ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেভেন সিস্টার্স (ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল) অঞ্চল থেকে পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিয়মিত যাতায়াত এখন ওপেন সিক্রেট বিষয়।

একই সাথে মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পেলাতুয়া এলাকায়, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন সামরিক ট্রেইনিং ক্যাম্প।
বর্তমানে এই অঞ্চলের দুটি সক্রিয় ক্যাম্পে বাংলাদেশের মারমা, চাকমা, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা ও কুকি জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৫০০ যুবক সক্রিয়ভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
সেখানে তাদেরকে Close Quarter Battle, Guerrilla Warfare (গেরিলা যুদ্ধ), এবং Town Combat (শহরভিত্তিক যুদ্ধ) বিষয়ে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সমতল ও পাহাড়ি ভূপ্রকৃতিতে লড়াইয়ের জন্য সেন্সিটিভ ব্যাটল ড্রিল পরিচালিত হচ্ছে।
আগামী ৫–৬ মাসের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে এবং তার সাথে সাথে বৃহত্তর কোয়ালিশন কমান্ড স্ট্রাকচার (সমন্বিত কমান্ড কাঠামো) তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে। এই নতুন স্ট্রাকচারে শুধু আরাকান আর্মি বা মিয়ানমারভিত্তিক বাহিনী থাকবে না; পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতরে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরাও সরাসরি যুক্ত হবে।
এর ফলে বাংলাদেশের ভেতরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য একটি পূর্ণমাত্রার কোয়ালিশন ফোর্স দাঁড়িয়ে যাবে, যার উদ্দ্যেশ্য বাংলাদেশি ভূখণ্ডের দখল ও অশান্তি তৈরি করা। এই বাস্তবতা বাংলাদেশের জন্য শুধুমাত্র একটি Tactical Threat (ক্ষুদ্র সামরিক হুমকি) নয়—বরং এটি Existence Threat (অস্তিত্ব সংকট)।পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি বিচ্ছিন্ন হয়, বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্ত খুলে যাবে এক ভয়ংকর দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তাহীনতার দিকে। একই সাথে আমাদের জানা প্রয়োজন, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে ভারতের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন প্রদান করা হয়েছে।
একই সময়ে তারা মিজোরামের আইজল শহরে একটি Coordination Office (সমন্বয় অফিস) চালু করেছে এবং দিল্লিতে গোপনে একটি Operational Office (অপারেশনাল অফিস) পরিচালনা করছে। সেখানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে নিয়মিত সমন্বয় ও পরিকল্পনা চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলবে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও চরমভাবে ভেঙে দেবে।
সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির নেতৃত্বে JSS, UPDF এবং অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সম্মিলিত ফোর্স এখন যে মডেল অনুসরণ করছে, তা হলো Hybrid Warfare Doctrine (সমন্বিত ও গেরিলা যুদ্ধনীতি), যেখানে সীমান্তের ওপারে ট্রেনিং গ্রহণ করে সীমান্তের ভেতরে হিট-অ্যান্ড-রান (hit-and-run) অপারেশন পরিচালনা করা হবে।
তাদের মূল লক্ষ্য হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি দুর্বল করে দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে একটি De facto Autonomous Zone (স্বাধীন অঞ্চল) তৈরি করা, যার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক মহলের সামনে ‘ethnic oppression’ (জাতিগত নিপীড়ন) আখ্যান তৈরি করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কৌশলগত প্রচারণা চালাতে পারবে।
ভারতের সক্রিয় সহযোগিতা এবং মিয়ানমারভিত্তিক অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের কারণে এই কোয়ালিশনের সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এখন শুধু সাবমেশিনগান, ব্যাটল রাইফেল বা লঞ্চারেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং Modern Communication Tactics (আধুনিক যোগাযোগ কৌশল), Decentralized Command Structure এবং Safe Logistics (নিরাপদ সরবরাহ ব্যাবস্থা) গড়ে তুলেছে। তাদের মূল সুবিধা হবে—বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক চাদরের আড়ালে আত্মগোপন করে চলার দক্ষতা, যা কনভেনশনাল মিলিটারি অপারেশন দ্বারা সহজে চিহ্নিত করা কঠিন হবে।
সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি (AA) শুধু বাংলাদেশের সীমান্ত সংকটের জন্যই হুমকি নয়, বরং সরাসরি রোহিঙ্গা সংকটকে আরো গভীর ও জটিল করে তুলছে, যাতে বাংলাদেশকে একটি স্থায়ী মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেওয়া যায়।
আরাকান আর্মি হলো সেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, যারা অতীতে বহু রোহিঙ্গা গণহত্যার (Rohingya Genocide) সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল, এবং ২০২৩ সাল থেকে তারা পরিকল্পিতভাবে তাদের “Doctrinal Operation” শুরু করেছে—যার মূল উদ্দেশ্য হলো আরাকান থেকে অবশিষ্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বিতাড়ন করা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা বিশেষ একটি আলাদা কমান্ড স্ট্রাকচার গঠন করেছে, যেটি নির্দিষ্টভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আরাকান ছাড়তে বাধ্য করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
এই সন্ত্রাসী পরিকল্পনার অধীনে নিয়মিত গনহত্যার পাশাপাশি তারা কয়েকটি নির্দিষ্ট অপারেশনাল পদ্ধতি অবলম্বন করছে।
০১। প্রথমত, তারা IDP ক্যাম্পগুলোর (Internally Displaced Person Camps) ভেতরে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করছে—জীবনযাপন দুর্বিষহ করে তুলছে, খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করছে, ফলে অসহায় মানুষগুলো বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।
০২। দ্বিতীয়ত, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ছোট ছোট জায়গায় অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি, ওষুধসহ ন্যূনতম মানবিক সহায়তাও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে তারা দারুণ অসহায় হয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সমুদ্র পাড়ি দিতে বাধ্য হয়। এর ফলশ্রুতিতে বহু রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে, এবং কিছু ভাগ্যবান গন্তব্য হিসেবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া পৌঁছাতে পেরেছে।
০৩। তৃতীয়ত, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিয়মিত হুমকি, নির্যাতন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন চালাচ্ছে, যা তাদের আরাকান ত্যাগে বাধ্য করছে।
এই সুপরিকল্পিত রোহিঙ্গা বিতাড়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আরাকান আর্মি একদিকে আরাকান অঞ্চলকে ‘Ethnically Homogenized Zone’ (জাতিগতভাবে একরূপিত এলাকা) এ পরিণত করতে চাইছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের উপর আরও শতশত হাজার উদ্বাস্তু চাপিয়ে দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রকে একটি অন্তহীন মানবিক ও নিরাপত্তা সংকটে নিমজ্জিত করতে চাইছে।
বাংলাদেশের জন্য এখন প্রয়োজন একটি Immediate Strategic Response (তাত্ক্ষণিক কৌশলগত জবাব), যা শুধু সামরিক নয়, বরং গোয়েন্দা, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক জোটের মাধ্যমেও পরিচালিত হবে।
০১। প্রথমত, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেনাবাহিনীর Forward Deployed Deterrence (অগ্রবর্তী ঘাঁটিভিত্তিক প্রতিরোধ কাঠামো) গড়ে তুলে দ্রুত সেনা সংখ্যা ও কৌশলগত মোতায়েন বৃদ্ধি করতে হবে, যেন প্রত্যেকটি প্রবেশপথ ও টার্গেট জোনে প্রতিরোধ প্রস্তুত থাকে।
০২। দ্বিতীয়ত, Border Intelligence and Surveillance (সীমান্ত গোয়েন্দা নজরদারি) এর জন্যে উচ্চক্ষমতার Drone Surveillance (ড্রোন নজরদারি) চালু করতে হবে, যা ইনফিলট্রেশন রুট (অনুপ্রবেশ পথ), Logistic Trail (সরবরাহ চেইন), ও শত্রুরমুভমেন্ট আগেভাগেই শনাক্ত করে একশন নিতে সহায়তা করবে। একইসাথে পাহাড়ি এলাকায় একটি স্থায়ী Ground Intelligence Network গড়ে তুলতে হবে, যেখানে স্থানীয় বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা নিজেরাও এই জাতিগত সন্ত্রাসের হুমকির মুখে রয়েছে তাদেরকে HUMINT Network-এর অংশ করে তথ্য সংগ্রহে লাগানো যেতে পারে।
০৩। তৃতীয়ত, এই পুরো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক Ground Building দরকার, যাতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায় এবং পাহাড়ি জনপদে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রভাব প্রতিহত করা সম্ভব হয়। রাজনৈতিক স্তরে জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্মে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিপ্রিয় জনগণকে সরাসরি সাথে নিতে হবে।
০৪। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে এই Hybrid Insurgency (হাইব্রিড বিদ্রোহ)-এর বিপদের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলতে হবে—বিশেষ করে জাতিসংঘ, ওআইসি (OIC), এবং মুসলিম বিশ্বে। আমাদের বলতেই হবে, যেভাবে পূর্ব তিমুরে (East Timor) স্বাধীনতার নামে জাতিগত আগুন জ্বালানো হয়েছিল, ঠিক তেমনি ষড়যন্ত্র এখন বাংলাদেশের জন্য চালানো হচ্ছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সন্ত্রাসের প্রকৃত রূপ এবং আরাকান আর্মি–JSS–UPDF এর কোয়ালিশনকে মুসলিম অঞ্চলের জন্য নতুন বালকান মডেল বানানোর পরিকল্পনা আজই থামাতে হবে। এটি কেবল বাংলাদেশ নয়—পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের জন্যে এক মহা হুমকি।
০৫।। পাশাপাশি বাংলাদেশকে অবশ্যই এমন Rohingya Freedom Fighters (রোহিঙ্গা স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী) দের শক্তিশালী ও সহযোগীতা করা উচিৎ, যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার পক্ষে রয়েছে। এদের প্রশিক্ষণ, সংগঠন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যাতে তারা সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ফিল্ড পর্যায়ে লড়াই চালাতে পারে।
তবে এই নীতিতে কখনোই ARSA (Arakan Rohingya Salvation Army) এর মতো প্রমাণিত বিশ্বাসঘাতক সংগঠনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। কারণ ARSA রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের পাশাপাশি, বাংলাদেশের অফিসারদের হত্যা করে সরাসরি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
এই মুহূর্তে কোনো উদারতা বা রাজনৈতিক সেন্টিমেন্টের জায়গা নেই। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হাত বাড়ালে জবাব হবে কঠিন, অবিচল এবং চূড়ান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার কিংবা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও বিচ্ছিন্ন হতে দেওয়া যাবে না।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে—যেখানে শত্রুরা সম্মিলিতভাবে আঘাত হানে, সেখানেই জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য, দৃঢ়তা ও স্পষ্টতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশ কারো করুণা বা নির্লজ্জ আন্তর্জাতিক সমঝোতার ওপর দাঁড়িয়ে নেই। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে তার হাজারো মুসলিমের রক্তের ওপর, ত্যাগের ওপর, তার খানজাহান ও শাহজালাল রাহিঃ এর ঈমানি ঐতিহ্যের ওপর।
সুতরাং, যারা আমাদের ভূমির দিকে চোখ তুলে তাকাবে, তাদের জন্য আমাদের বার্তা….
“আমরা কখনো নত হবে না। আমরা শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।”
Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore