দেশে আবারও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ফেরাতে তৎপর হয়ে উঠেছে ব্যাংকডাকাত ও জনগণের টাকা পাচারকারী এস-আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান কুখ্যাত আওয়ামী দোসর সাইফুল আলম মাসুদ। এই আওয়ামী দোসর সম্প্রতি দিল্লী গিয়ে শেখ হাসিনার সাথে গোপন মিটিং করে তাকে নগদ ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে এবং আরো ২০০০ কোটি টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এসেছে এই চিহ্নিত আওয়ামী দোসর ও গণমানুষের শত্রু সাইফুল আলম মাসুদ।
উমরাহ সফরের নামে পলাতক আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে বৈঠকঃ
গত ২রা আগস্ট ২০২৫, পবিত্র উমরাহ পালনকে সামনে রেখে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম প্রধান দোসর সাইফুল আলম মাসুদ সিঙ্গাপুর থেকে একটি ফ্লাইট যোগে অবতরণ করেন। তার একদিন পর ৩রা আগস্ট তিনি মক্কার A Fairmont Hotel, Makkah Clock Royal Tower এ উঠেন।
এদিকে একটি বিশ্বস্ত সূত্র আমাদেরকে নিশ্চিত করেছে যে – পবিত্র উমরাহ পালন করার দোহাই দিলেও সাইফুল আলম মাসুদের মক্কায় যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। চিহ্নিত এই আওয়ামী দোসর সেখানে যান মূলত দেশ থেকে পলায়নকৃত আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে সাক্ষাত করতে। মক্কা ক্লক টাওয়ারের A Fairmont Hotel-এ বসে তিনি এই পলাতক ও খুনি আওয়ামী নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন।
জনগণের পাচারকৃত টাকায় হোটেল ক্রয়ঃ
ঐ বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে আমরা আরো জানতে পেরেছি যে, আওয়ামী দোসর ও জনগণের অর্থ আত্মসাৎকারী এই সাইফুল আলম মাসুদ দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের বিনিময়ে মক্কায় একটি বিলাসবহুল হোটেল ক্রয় করার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে জরুরী মিটিং করেন।
মদিনায়ও পলাতক খুনিদের সাথে দেশ বিরোধী বৈঠকঃ
পলাতক ও খুনি আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে দেশ বিরোধী বিভিন্ন পরিকল্পনা সাজানো শেষে পরদিন ৪ই আগস্ট সাইফুল আলম মদিনায় চলে যান এবং “ইলাফ আল তাকওয়া” (Elaf Al Taqwa) হোটেলে উঠেন। এখানে তিনি চট্টগ্রামের কিছু চিহ্নিত আওয়ামী ব্যবসায়ীদের সাথে দেখা করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। ২দিন সেখানে অবস্থান শেষে ৬ই আগস্ট তিনি দুবাইতে চলে যান।
মূল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে দিল্লীতে আগমন
দুবাইতে কোন রকম বিলম্ব না করে ৬ই আগস্ট একটি বিশেষ ফ্লাইট যোগে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লীতে পৌঁছান এস আলম। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, দিল্লী সফরে তার সফরসঙ্গী ছিল স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তাদের ছোট ছেলে ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম। দিল্লীতে নেমে তারা উঠেন ভারতের বিখ্যাত ৫ তারকা হোটেল The Oberoi, New Delhi তে, আর সেখান থেকে বাস্তবে ফুটে উঠতে শুরু করে সাইফুল আলমের এই সফরের মূল এজেন্ডা।
এসময় তার সাথে দেখা করে পলাতক আওয়ামী খুনি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত সহ আরো অনেকে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনা হয় তাদের মধ্যে।
খুনি হাসিনার সাথে গোপন বৈঠক
তবে এস আলমের এই সফরের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এজেন্ডা ছিল স্বয়ং খুনি হাসিনার সাথে তার গোপন মিটিং। ৮ই আগস্ট দুপুরে উক্ত হোটেলে এস আলম তার সকল ফোন ও ইলেকট্রনিক গেজেট রেখে একটি নাম্বারপ্লেটহীন গাড়িতে করে রওনা করেন, আর পথে দুই-দুইবার পরিবর্তন করা হয় তাকে বহন করা গাড়ি। অবশেষে তাকে বহনকারী গাড়িটি পৌঁছায় Lutyens Bungalow Zone-LBZ-এ অবস্থিত খুনি হাসিনার বাসভবনে। যেখানে সাইফুল আলম দুপুর ১টা থেকে প্রায় সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন।
এই দীর্ঘ সময়ে শেখ হাসিনার সাথে একান্ত আলাপ হয় এস আলমের। আমাদের প্রাপ্ত তথ্যমতে এই সময়ে ভারতের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত গোপন বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া খুনি হাসিনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ও ক্ষমতায় ফিরে আসতে তার দীর্ঘদিনের ফাইনান্সিয়াল ল্যাসপেন্সার এস আলমের নিকট ৪,৫০০ (চার হাজার পাঁচশত কোটি) টাকা চান এবং এস আলম এই পরিমাণ টাকা খুনি হাসিনাকে দিতে সম্মত হন। যা নিম্ন লিখিত খাতসমূহে ব্যয় করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়…
০১। ইন্টারন্যাশনাল লবি ও নানা দেশের পলিসি মেকারদের আওয়ামীলীগকে সহযোগিতা করার জন্যে তাদেরকে ম্যানেজ করা।
০২। আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশজুড়ে নাশকতা, অরাজকতা ও এমন পরিস্থিতি তৈরি করার কাজে ব্যয় করা, যাতে অন্তর্বর্তী সরকার পড়ে যেতে বাধ্য হয়।
০৩। সরকারি আমলা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কিনে ফেলা।
০৪। আওয়ামী নেতা কর্মীদের জামিনের লক্ষ্যে খরচ করা।
০৫। এস আলমের সুগার রিফাইনারি সহ দেশব্যাপী বিভিন্ন শ্রমিকদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠনে।
আর এ অর্থ গ্রহণ, ডিস্ট্রিবিউশন ও ম্যানেজমেন্ট এর জন্যে ৩ জনের গঠিত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন… আওয়ামী খুনি জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
পরবর্তী বিভিন্ন বৈঠক ও অন্যান্য কার্যক্রমঃ
সেখান থেকে ফিরে এসে আওয়ামী দোসর এস আলম তার হোটেল The Oberoi, New Delhi-তে উঠে। ৮ ও ৯ই আগস্ট টানা ২দিন তিনি উক্ত হোটেলে অবস্থান করে ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সিরিজ মিটিং করেন। এরপর ১০ই আগস্ট এস আলম ফের শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে তার বাসভবনে যান। সেদিন এস আলম দুপুর ৩টা থেকে প্রায় রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
এই মিটিংয়ে শেখ হাসিনাকে এস আলম ২,৫০০ কোটি টাকা প্রদান করেন (এই টাকা এস আলম তার আদানি গ্রুপে থাকা ৩ বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট থেকে উঠিয়ে দেন) ও বাকি ২ হাজার কোটি টাকা নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
পরদিন অর্থাৎ ১১ই আগস্ট এস আলম নিউ দিল্লী থেকে বিমানযোগে মুম্বাইতে যান এবং সেখানে অবস্থিত Kokilaben Dhirubhai Ambani Hospital and Medical Research Institute হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট নেন। অবশেষে ১৫ই আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তিনি দিল্লিতে ফিরে আসেন। এরপর ১৬ই আগস্ট শেষ বারের মত শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করেন এবং দেশ বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা আঁটেন। সবশেষে ১৭ই আগস্ট দিল্লী সফর শেষ করে এস আলম সিঙ্গাপুরে ফিরে যান।
রুখে দিতে হবে এই দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র
সবমিলিয়ে এস-আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী দোসর সাইফুল আলম মাসুদের এই সফর ও শেখ হাসিনার সাথে একাধিক গোপন বৈঠক দেশকে আবারও রাজনৈতিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই।
জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার এবং তা আবার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার – এটি কোন সাধারণ ব্যাপার নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি। এই বিষয়ে দেশবাসীর সতর্ক দৃষ্টি ও সচেতনতা এখন অতীব জরুরি এবং একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত এই ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে করে কেউ দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ না পায়।