ইসলাম ইনসাইট

যেভাবে এদেশে রোহিঙ্গাবিদ্বেষ ছড়ানো হলো

Rohingya Muslim

২০১৭ সালের গণহত্যায় লাখো রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন। সেসময় আমরা বাংলাদেশীরা তাদের প্রতি আকুন্ঠ ভালোবাসা দেখিয়েছিলাম। ত্রাণ, চিকিৎসাসেবা, বাসস্থানের ব্যবস্থা, রাস্তায় তাদের পক্ষে প্রতিবাদ মিছিলসহ সামর্থ্যের আলোকে সবটুকু করেছিলাম।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রতি এই দরদমাখা ভালোবাসা দেখে একদল ইসলামবিদ্বেষীরা অনলাইনে রোহিঙ্গাবিদ্বেষ ছড়াতে লাগলো। তারা অনলাইনে প্রচার করলোঃ

তারা খারাপ লোক বলেই মার খেয়েছে
তারা জন্মগতভাবে খারাপ প্রকৃতির মানুষ
তারা পরিবেশ দূষণ করছে
তারা বাংলাদেশ দখল করে ফেলবে
তারা বেশি বেশি করে বাচ্চা পয়দা করছে
তারা বাংলাদেশীদের ভিসা নিয়ে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করছে

এরকম আরো অনেক কিছু। কেউ রোহিঙ্গাদের পক্ষে বলতে গেলেই বলতো- এত ভালোবাসতে চাইলে আপনার বাসায় নিয়ে রোহিঙ্গাদের রাখেন।

এভাবেই রোহিঙ্গাদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ায় উক্ত গ্রুপ। ফলে রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা ছিল, তা রুপ নেয় বিদ্বেষে। তাদেরকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, এমনকি নিজেদের মধ্যে একে অপরকে রোহিঙ্গা বলে গালি দিতেও দ্বিধাবোধ করি না।

উক্ত ইসলামবিদ্বেষী গ্রুপ একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের মধ্যকার ঐক্য নষ্ট করেছে, তা হলো
তারা আরাকান – বাংলাদেশসহ সমগ্র উপমহাদেশকে মুসলিমমুক্ত করতে চায়। তারা কখনোই চায় না বাংলাদেশ – রোহিঙ্গা মুসলিম ঐক্য বজায় থাকুক। এজন্য তারা সবার আগে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করতে রোহিঙ্গা-বাংলাদেশীদের ভালোবাসায় ফাটল ধরিয়েছে।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য থাকলে রোহিঙ্গারা পূর্ণ সমর্থন – সহযোগিতা নিয়ে আরাকান স্বাধীন করতে পারবে। সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে নির্মূল করতে পারবে। ফলে বৌদ্ধ ও হিন্দুত্ববাদীদের আরাকানের বিপুল সম্পদ লুটপাটের পরিকল্পনা নস্যাৎ হবে।

এজন্য বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্টদের দ্বারাই সিস্টেমেটিকালি রোহিঙ্গা বিদ্বেষ উস্কে দেয়া হয়েছিলো।

এই বিদ্বেষ ছড়ানোতে পশ্চিমা এনজিওবাদীদের সমর্থন ছিলো, কারণ রোহিঙ্গারা তাদের ভূমিতে ফিরে গেলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে রোহিঙ্গাদের দেখিয়ে তারা বিপুল পরিমাণে বিদেশী সাহায্য পাবে না। এজন্য রোহিঙ্গারা শরনার্থী শিবিরে থাকলেই তাদের জন্য ভালো।

আমাদের সকলকে একটি বিষয় বুঝতে হবে, রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার। গণহত্যা ও অসংখ্য জুলুমের শিকার হয়ে বারবার তারা এদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনো তারা বৌদ্ধ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদের ট্রমার মধ্যে থাকা স্বাভাবিক। এজন্য আচরণও ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সেটা নিয়ে বিদ্বেষ কেন ছড়াতে হবে ?

একটা জাতির মধ্যে সবাই ভালো থাকে না। ০৫-১০% মানুষের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে, তারা অপরাধ প্রবণ হতেও পারে। এজন্য পুরো জাতিকে আমরা গালি দিতে পারি না। এই অধিকার আমাদের নেই। বাংলাদেশীদের মধ্যে এমন মানুষ আছে। তাই বলে সব বাংলাদেশী কিন্তু খারাপ নয়। কিন্তু সেই ৫-১০% অপরাধ প্রবণ মানুষের জন্য সবাইকে গণহারে খারাপ বলা বা গালি দেয়া মোটেই সমীচীন নয়।

আমাদের করণীয়ঃ

মুসলিমরা এক জাতি , এক দেহের ন্যায়। আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা কুরআনে বলেন,
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَةٌ فَ‏
মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই (সূরা আল – হুজুরাতঃ ১০)

এব্যাপারে নবীজি সাঃ বলেন,
মু’মিনদের উপমা হলো একটি দেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নংঃ ৬৪৮০]

সুতরাং আমাদের দায়িত্ব বর্তমান পৃথিবীতে সকল প্রান্তের মজলুম মুসলমানদের পক্ষে কাজ করা। তাদের পাশে অভিভাবক হিসেবে দাঁড়ানো। ভারত, আরাকান, গাজা, কাশ্মীর, উইঘুর, চেচনিয়া, কিরগিস্তানসহ সবার প্রতি অন্তরে আমাদের ব্যথা থাকবে।

তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় দায়িত্ব প্রতিবেশী মজলুম রোহিঙ্গাদের পাশে অভিভাবক দাঁড়ানো। তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়া। সর্বোপরি তাদেরকে স্বাধীন করতে আমাদের সর্বোচ্চটুকু ঢেলে দেয়া।

আমরা সত্যিকার অর্থে গাজাবাসীর জন্য যা করতে চাই, তা আরাকানের মজলুম ভাই – বোনদের জন্য করতে পারবো ইন শা আল্লাহ। তাই আসুন সকল মজলুম মুসলিমদের জন্য কাজ করি এবং বিশেষ করে আরাকানের মুসলমানদের বিজয়ে শক্তিশালী ভুমিকা পালন করি।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore