দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলবর্তী অঞ্চল আরাকান। একসময় এই অঞ্চল ছিল মুসলিমদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতির কেন্দ্র। পূর্বে আরাকানের বিস্তৃত পর্বতমালা, পশ্চিমে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর, উত্তরে চট্টগ্রাম পার্বত্যাঞ্চল এবং দক্ষিণে বিস্তৃত সমুদ্রসীমা-এই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আরাকানকে আলাদা পরিচয়ে স্বতন্ত্র করেছে। এই আরাকানের রয়েছে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের সুদীর্ঘ ইতিহাস যা আমরা অনেকেই জানি না।
এই সিরিজে আমরা আরাকানে কিভাবে ইসলাম এলো, কিভাবে আরাকান একটি শক্তিশালী ইসলামী সাম্রাজ্যে রুপ নিলো ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
আরাকানে বসবাসরত মানুষের জীবিকা ছিল মূলত কৃষি। পরবর্তীতে কৃষিকেন্দ্রিক জীবনের পাশাপাশি গড়ে ওঠে সমুদ্রপথে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতি। এই নৌপথেই আরব বিশ্বের সঙ্গে আরাকানের সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যা পরবর্তীতে ইসলামের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরাকানে ইসলাম আগমন
ইতিহাসবিদদের মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই ইসলামের বাণী পৌঁছে যায় আরাকানে। হিজরি প্রথম শতকে, অর্থাৎ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের শেষ দিকে আরব বণিকেরা বঙ্গোপসাগর হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পথে বাণিজ্য করতে গেলে তারা আরাকানেও নোঙর ফেলে। তাদের সঙ্গে আগত শান্তিপূর্ণ দাওয়াত, ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধ ধীরে ধীরে স্থানীয় জনগণের মাঝে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
আরব বণিকদের ভূমিকা
খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক থেকেই আরব বণিকদের দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা ভারত, মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা) ও চীনের ক্যান্টন বন্দরে যাতায়াত শুরু করে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে এসে এই বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হয়। আরবের কুরাইশ বণিকরা তখন দক্ষিণ ভারতের মালাবার, চের, চট্টগ্রাম ও আরাকানের আকিয়াব বন্দরে ব্যবসা কেন্দ্রিক সমাজ গড়ে তোলে।
তবে শুধু বাণিজ্য নয়, এই বণিকরা ইসলামের দাওয়াতও ছড়িয়ে দেন যাত্রাপথে। কাদিসিয়ার যুদ্ধজয়ী সেনাপতি হজরত সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. এর পিতা হজরত আবু ওয়াক্কাস মালিক ইবনে ওহাইব রা. ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চীনের কোয়াংজৌ শহরে পৌঁছান এবং সেখানে একটি মসজিদ স্থাপন করেন।
চীনে আসার আগে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা মালাবার, চট্টগ্রাম ও আরাকানে জাহাজ নোঙ্গর করে সেসব এলাকাতে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে দেন।
(চলবে….)