ইসলাম ইনসাইট

জুঁইয়ের দেশ থেকে মাদকের সাম্রাজ্য সিরিয়া

জুঁইয়ের দেশ থেকে মাদকের সাম্রাজ্য সিরিয়া
জুঁইয়ের দেশ থেকে মাদকের সাম্রাজ্য সিরিয়া। ছবি : আরাবি ২১

একসময় জুঁই ফুলের জন্য বিখ্যাত সিরিয়া এখন মাদক ক্যাপ্টাগনের উৎপাদন ও সরবরাহের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা আর অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশটি কৃষি অর্থনীতি থেকে সরে গিয়ে মাদক বাণিজ্যকে আয়ের প্রধান উৎসে পরিণত করেছে। বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত ক্যাপ্টাগনের প্রায় ৮০ শতাংশই তৈরি হয় সিরিয়ায়।

ক্যাপ্টাগন হলো ‘ফেনিথাইলিন’ নামে একটি শক্তিশালী মাদক। সাদা ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এটি, যা স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এটি শক্তি ও মনোযোগ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হলেও অতিরিক্ত সেবনে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়। উৎপাদনে খরচ এক ডলারেরও কম হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে এটি খুব চড়া দামে বিক্রি হয়।

যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার মুখে সিরিয়ার বিগত আসাদ সরকার ক্যাপ্টাগন বাণিজ্যকে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে। গবেষণা বলছে, দেশটির মোট আয়ের অর্ধেকের বেশি আসে এই মাদক রপ্তানি থেকে। ২০২১ সালে সিরিয়া এই বাণিজ্য থেকে ৫.৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। সরকার-সমর্থিত চক্রগুলো প্রতিবছর প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে।

এই মাদক শুধু সিরিয়াতেই নয়, বরং জর্ডান, লেবানন, ইরাক এবং বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোতে পাচার করা হয়। সৌদি আরব ক্যাপ্টাগন রোধে কড়া পদক্ষেপ নিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে সৌদি আরব প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট আটক করেছে। ২০২৩ সালে জেদ্দা বন্দরে ১.২ কোটি ট্যাবলেটের একটি চালান আটক হয়, যা সিরিয়ার মাদক নেটওয়ার্কের ব্যাপকতাই তুলে ধরে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়ার আসাদ সরকার সরাসরি ক্যাপ্টাগন বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। এই মাদক বাণিজ্য থেকে পাওয়া অর্থ শাসন টিকিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও সিরিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

ক্যাপ্টাগন বাণিজ্যের প্রভাব শুধু সিরিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তায়ও পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপজুড়ে সিরিয়ার মাদক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সুযোগে এই বাণিজ্য আরও বাড়ছে।

জুঁইয়ের সুবাসে সুবাসিত একসময়কার সিরিয়া এখন মাদক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাদক বাণিজ্য থেকে পাওয়া অর্থ হয়তো সিরিয়ার জন্য তাৎক্ষণিক আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে দেশটির সমাজ ও আশপাশের অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ সংকট তৈরি করছে।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore