ইসলাম ইনসাইট

সিরিয়ান মুদ্রা লিরার পতন যেভাবে হয়

সিরিয়ান মুদ্রা লিরার পতন যেভাবে হয়
সিরিয়ান মুদ্রা লিরার পতন যেভাবে হয়। ছবি: রয়টার্স

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়ার মুদ্রা লিরা টানা পতনের মুখে পড়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধের ধাক্কায় মুদ্রার মান ক্রমাগত কমতে থাকে। ২০২৪ সালে বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর কিছুটা পুনরুদ্ধারের আভাস মিললেও লিরার মান এখনও চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

বর্তমানে সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত বিনিময় হার অনুযায়ী প্রতি ডলার সমান ১৫ হাজার লিরা। তবে বাজারে এই হার আরও বেশি অস্থিতিশীল।

লিরার ক্রমাগত পতন

২০১০ সালে সিরিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল। প্রতি ডলারের বিপরীতে লিরার মান ছিল ৪৭-৫০। কৃষি, তেল এবং পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতি তখন সচল ছিল।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর লিরার মান কমতে শুরু করে। ২০১২-১৩ সালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং তেল রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়ায় ডলারের বিনিময় হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০-১৮০ লিরা।

২০১৪ সালে সংঘাত তীব্র হওয়ায় লিরার মান আরও কমে দাঁড়ায় ২০০-২২০ লিরায়। ২০১৫-১৬ সালে যুদ্ধ খরচ ও তেলের খনি হারানোর কারণে ডলারের বিনিময় হার ৫০০ লিরা ছাড়িয়ে যায়।

২০১৭-১৮ সালে রাশিয়ার সামরিক সহায়তায় কিছুটা স্থিতিশীলতা এলেও মুদ্রার মানে তেমন প্রভাব পড়েনি। এ সময়ে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৪৩০-৫০০ লিরার মধ্যে।

২০১৯ সালে লেবাননের আর্থিক সংকট সিরিয়ার অর্থনীতিতে বড় আঘাত হানে। বছরের শেষ দিকে ডলারের বিনিময় হার দাঁড়ায় ৯০০-১০০০ লিরায়।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের “কাইসার আইন” কার্যকর হলে লিরার মান প্রথমবারের মতো ৩ হাজার লিরা ছাড়িয়ে যায়। ২০২১ সালে তা দাঁড়ায় ৩৫০০-৪০০০ লিরায় এবং ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪৫০০-৫০০০ লিরায় পৌঁছে।

২০২৩ সালে লিরার পতন আরও তীব্র হয়। বছরের শেষে ডলারের বিনিময় হার দাঁড়ায় ১৩ হাজার লিরা।

বর্তমান পরিস্থিতি

২০২৪ সালে সরকার পতনের পর ডলারের বিনিময় হার ১৬ হাজার লিরা ছাড়িয়ে যায়। পরে কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও বর্তমানে তা ১৫ হাজার লিরার কাছাকাছি রয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

২০১১ সালে সিরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। স্বর্ণের রিজার্ভ ছিল ২৫.৮ টন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২.২৩ বিলিয়ন ডলার। তবে যুদ্ধের বছরগুলোতে এই রিজার্ভের ব্যবহার ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।

পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিলেও তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। লিরার মান স্থিতিশীল করতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বৈদেশিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore