ইসলাম ইনসাইট

মাহের আল-আসাদ : সিরিয়ার মাদক সম্রাট ও মৃত্যুর দূত

মাহের আল-আসাদ : সিরিয়ার মাদক সম্রাট ও মৃত্যুর দূত
মাহের আল-আসাদ : সিরিয়ার মাদক সম্রাট ও মৃত্যুর দূত। ছবি : আল জাজিরা

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও বিপ্লবের সময়ে মাহের আল-আসাদের নাম ভয়ের সাথে উচ্চারিত হতো। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ছোট ভাই মাহের শুধু সামরিক কমান্ডারই নন, সিরিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের অন্যতম মূল কারিগর। তার নাম জড়িত মাদক ব্যবসা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলে দেওয়ার একাধিক অভিযানে। আজকের প্রতিবেদনে তার ক্ষমতার উত্থান, কর্মকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তার প্রভাবের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।

ক্ষমতার উত্থান ও প্রভাব বিস্তার

বাশার আল-আসাদ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই মাহের আল-আসাদ বাথ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এই পদ থেকে তিনি বাশারের ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। মাহের ছিলেন সেই মূল কণ্ঠস্বর, যিনি সিরিয়ার ‘দামেস্ক বসন্ত’ নামে পরিচিত রাজনৈতিক উন্মুক্ততার যুগের সমাপ্তি ঘটান। রাজনৈতিক সংস্কারের পরিবর্তে তার কঠোর অবস্থান সিরিয়াকে দমনমূলক শাসনের দিকে আরও ধাবিত করে।

বিপ্লব দমন
২০১১ সালে সিরিয়ায় বিপ্লব শুরু হলে মাহের আল-আসাদ সরাসরি তার নেতৃত্বাধীন চতুর্থ ডিভিশনের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনে সক্রিয় হন। এই বাহিনী অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সমালোচিত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমনে করতে গিয়ে তার নির্দেশেই সেনারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়, যার ফলে বিপ্লবের প্রথম ধাপটি দ্রুত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। মাহের ছিলেন সেই নির্দেশক, যিনি আসাদ শাসনের টিকে থাকা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।

মাদক সাম্রাজ্যের সম্রাট

আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মাহের আল-আসাদ, তার ভাই বাশার এবং চাচাতো ভাই রিফাত আল-আসাদ সিরিয়ায় কেপ্টাগন নামক মাদক উৎপাদন ও বিতরণের মূল নিয়ন্ত্রক। এই মাদক ব্যবসা শুধু সিরিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে শক্তি জুগিয়েছে না, আসাদ পরিবারে পরিণত হয়েছে এক বিশাল আয়ের উৎসে। ব্রিটিশ সূত্র অনুযায়ী, মাহেরের মাদক সাম্রাজ্য বছরে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করে। কেপ্টাগনের মাধ্যমে আসাদ শাসন শুধু অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়নি, এটি আন্তর্জাতিক ক্ষমতার কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।

মাদক দিয়ে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক চাপ

মাহের আল-আসাদ মাদককে শুধু অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি, বরং এটি হয়ে উঠেছে তার রাজনৈতিক অস্ত্র। একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কেপ্টাগন ব্যবহার করে তিনি নির্দিষ্ট কিছু দেশে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছেন। মাদক সরবরাহ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

পলায়ন

সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাহের আল-আসাদ সিরিয়া থেকে পালিয়ে গেছেন। আল-জাজিরার সূত্র অনুযায়ী, তিনি ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন রুটে উত্তর-পূর্ব সিরিয়া পেরিয়ে ইরাকের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore