ইসলাম ইনসাইট

আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনের ধারাবাহিক ইতিহাস (১ম পর্ব)

আচ্ছা বলুন তো, পৃথিবীতে বহু বছর ধরে বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানরা নির্যাতিত – নিপীড়িত হয়ে আসছে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়া, উইঘুর, চেচনিয়া – বসনিয়া, সার্বিয়া, আরাকান, ভারত, মিসর, আলজেরিয়াসহ দেশগুলোর অসংখ্য অগণিত মুসলমানগণ। কিন্তু আমরা মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা দেশের মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে জানি।

কিন্তু এটা কয়জন ই বা জানি যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বছর ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত কোন দেশের মুসলমানেরা ? উত্তর আমাদের প্রায় সবার ই অজানা। বিশেষ করে এই বঙ্গদেশের মুসলিমদের।

কারণ, আমরা আমাদের নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত আছি। প্রায় সাত বছর ধরে আমাদের দেশে মুহাজির হিসেবে তারা আশ্রয় গ্রহণ করেছে। অথচ আমরা তাদেরকে খারাপ চোখে দেখি!!! আমার পাশে প্রতিবেশী মুসলিম দেশের ভাইয়েরা প্রতিনিয়ত মার খাচ্ছে, অথচ আমরা এব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ।

পাঠকরা এবার আশাকরি ধরতে পারবেন, কাদের নিয়ে কথা বলছি। জ্বী, আরাকানের নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়েই কথা বলছি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী বছর ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত মুসলিম জনগোষ্ঠী হচ্ছে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়। এখনো তারা জুলুমের শিকার হচ্ছে।

 

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, শত বছর ধরে চলা নির্যাতনের শুরু কোথা থেকে ? কিভাবে এতো সমৃদ্ধ একটি জাতি শরণার্থীতে রুপ নিলো? তাহলে চলুন ইতিহাস থেকে ঘুরে আসা যাক।

 

১ম পর্বঃ

৮ম শতাব্দীতে আরাকান অঞ্চলে আরবদের আগমন শুরু হয়। তাদের ব্যবসায়িক কাফেলা সমুদ্রপথে ভ্রমণ করতো। আরাকানে আসার মূল কারণ  হলো সেসময় আরাকান ব্যবসার জন্য একদম উপযুক্ত একটি অঞ্চল ছিল। ঐসময় আরাকানে বসবাসকারীদের বেশীরভাগই ছিল বৌদ্ধধর্মের মানুষ। তৎকালীন রাজা নরমিখলা যখন ইসলাম গ্রহণের পর তার সকল অনুসারীরাও ইসলাম গ্রহণ করেন, ফলে আরাকান একটি মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে পরিণত হয়।

সোলাইমান শাহ(নরমিখলা) এবং তার পরবর্তী অনেক রাজা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আরাকানে ইসলামী শাসন অব্যাহত রেখেছিলেন, ফলে আরাকান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়।

 

দীর্ঘ সময় ধরে মুসলিমের ন্যায় ও ইনসাফের শাসনের পর ১৬৬০ সালে আরাকানের মুসলিমদের উপর নেমে আসে হত্যা ও নির্যাতনের এক অমোঘ কালো অধ্যায়। মগরা আরাকানের মুসলিমদের উপর চালায় নির্যাতন ও গণহত্যা। রাজা শ্রীচন্দ্র সুধর্মা মুসলিম নাম ও উপাধি নিষিদ্ধ করেন। সে থেকেই আরাকানের মুসলিম শাসনের ঐতিহ্যমন্ডিত যুগের সমাপ্তি ঘটে। সুধর্মা কর্তৃক মোঘল রাজা শাহসূজা স্বপরিবারে খুন হবার পর থেকে নির্যাতন ও গণহত্যা শুরু হয়, তা এখনো চলমান রয়েছে। সেসময় মগরা আরাকানের মুসলিমদের হত্যার পাশাপাশি চট্রগ্রাম বন্দরে দাস-দাসী হিসেবে বিক্রি করতো।

 

১৭৭৫ সালে রাজা বোধাপায়ার ইন্ধনে মগ বার্মিজরা আরাকানের উপর সরাসরি আক্রমণ করে। অগণিত রোহিঙ্গা মুসলিম সেসময় শহীদ হোন। জীবন বাঁচাতে ৩৫০০০ এরও অধিক রোহিঙ্গা মুসলিম চট্রগ্রামে চলে আসে। ১৭৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বোধাপায়া আবারো আরাকানে ৩০০০০ বার্মিজ সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করে। তার এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল আরাকান অঞ্চলকে মুসলিমশূন্য করে ফেলা।

 

১৭ বছর পর ১৮০২ সালে আরেকটি গণহত্যা চালানো হয়, ফলে প্রাণ বাঁচাতে  কক্সবাজারের রামুতে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নেয়। সেসময় বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় যার প্রভাবে অধিকাংশ শরণার্থী মৃত্যুবরণ করে।

 

ইতিহাসের বাকি অংশ জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore