ইসলাম ইনসাইট

নব্য জাহিলিয়াত: দুই ফেৎনার নাম ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তা

 

পৃথিবীতে জাহিলিয়াতের একটা ইতিহাস আছে। সে ইতিহাস যদিও প্রাচীন তারপরেও জাহিলি যামানায়ও মানুষ হক-বাতিল যাই হোক একটা ধর্ম মেনে চলতো। ধর্মের বিধি নিষেধের অধীন থাকতো। যদিও সেই ধর্মের কোনো ভিত্তি ছিল না, তবুও নিজেকে তারা একেবারে স্বাধীন ভাবতো না।

আর বর্তমান সময়ে, মানুষ কেবল ধর্ম থেকে বিচ্যুতই নয়, বরং কুফরিতেও ডুবে আছে। তারা ধর্মীয় বিধি-বিধানকে স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার বিরোধী মনে করে। ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে উদ্ভূত “ধর্মহীন ব্যক্তি-স্বাধীনতা” নামক ধারণাটি সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলেছে।

 

এই ধর্মহীনতার প্রভাব মুসলিমদের মধ্যেও ব্যাপক ভাবে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই অবচেতনভাবে ধর্মীয় বিধিনিষেধ থেকে মুক্তবাদী চিন্তায় আকৃষ্ট হচ্ছে।

 

❌ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।

❌ ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

❌ মানুষের বিবেকই শ্রেষ্ঠ আদালত।

❌ জীবনটা আমার পছন্দও আমার।

❌ আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব।

 

ইত্যাদি বিভিন্ন শ্লোগান এ কুফরি ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকেই উদ্ভূত। ধর্মদ্রোহিরা তো প্রকৃত অর্থেই এগুলোকে ধর্মের আওতামুক্তির অর্থে ব্যবহার করে। সাধারণ মুসলিমরা হয়তো সেভাবে চিন্তা করে না, তবে অবলিলায় বলে যায়।

 

আকল ও জ্ঞান-বুদ্ধি মানদণ্ড নয় আসলে যারা স্বাধীনতার নামে ধর্মের আওতামুক্ত হতে চায় তারা প্রকৃত অর্থে শয়তান ও নফসের গোলাম হয়ে পড়ে। প্রথমত আপনাকে বুঝতে হবে, মানুষ তার আকল ও জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে অনেক কিছু বুঝতে পারলেও আকল সর্বাবস্থায় সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। কারণ,

 

মানুষের জ্ঞান খুবই সীমিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জ্ঞানের সামনে যার কোনো তুলনাই হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا (85)} [الإسراء: 85]

তোমাদেরকে খুব সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে। -ইসরা ৮৫

 

মূসা আলাইহিস সালাম ও খাজির আলাইহিস সালামের ঘটনায় এসেছে,

وجاء عصفور فوقع على حرف السفينة فنقر في البحر نقرة فقال له الخضر: ما علمي وعلمك من علم الله إلا مثل ما نقص هذا العصفور من هذا البحر. صحيح البخاري (4/ 1752)، رقم الحديث 4448، كتاب التفسير، سورة الكهف

একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির মাথায় বসে সাগরে একটি ঠোকর দিল। তখন খাজির আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামকে লক্ষ করে বললেন, (হে মূসা) এই চড়ুই পাখিটি (ঠোকর দিয়ে) এই সমূদ্রের পানি যতটুকু কমাতে পেরেছে, আল্লাহ তাআলার ইলমের সামনে আমার আর তোমার ইলমের এমনই হাল। -সহীহ বোখারি ৪৪৪৮

 

মহাবিশ্বের বিশালতার কাছে আমাদের পৃথিবী একটি বিন্দুর মতো। বিজ্ঞানীরা যে মহাবিশ্ব আবিষ্কার করেছেন তা কেবলমাত্র প্রথম আকাশ। এর উপরে আরও ছয়টি আকাশ রয়েছে। সাত আকাশ এবং সাত যমিন আল্লাহর কুরসির সামনে একটি আংটির মতো। আর কুরসি আল্লাহর আরশের সামনে একটি আংটির মতো, আল্লাহু আকবার।

 

তাহলে বলুন তো এই বিশাল সৃষ্টির কাছে একজন মানুষ কতটুকু? তার বুদ্ধি কতটুকু❓

 

তাহলে কিভাবে আমরা নিজেদের স্বাধীনভাবে ভাবতে পারি❓

 

আমাদের সৃষ্টিকর্তা যা বলেছেন তাই সঠিক, যা নিষেধ করেছেন তাই বাতিল। সৃষ্টিকর্তা যা বলেছেন এবং যা সৃষ্টি করেছেন তার কুদরতের একটি অংশও আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে বোঝা সম্ভব নয়।

 

তাহলে কিভাবে আমরা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশের বাইরে গিয়ে নতুন করে হক-বাতিল খুঁজতে পারি❓

 

 

 

আমাদের সৃষ্টিকর্তা কি জানেন না? নাকি আমরা তাঁর চেয়ে বেশি জানি?

 

{ أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ} [الملك: 14]

যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? –মূলক ১৪

 

{قُلْ أَنْزَلَهُ الَّذِي يَعْلَمُ السِّرَّ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ} [الفرقان: 6]

আপনি বলে দিন, এ (বাণী) তো সেই সত্তা নাযিল করেছেন, যিনি আকাশমণ্ডলী এবং যমিনের যাবতীয় গুপ্ত রহস্য জানেন। -ফুরকান ৬

 

অতএব, মুক্তচিন্তা হক ও সত্যের অনুসন্ধান নয়; মুক্ত চিন্তা অনধিকার চর্চা। যদি প্রকৃত অর্থেই কেউ স্বাধীনভাবে চিন্তা করে, তাহলে আল্লাহকেই খোঁজে পাবে। যেমনটা আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন,

 

{سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ} [فصلت: 53]

আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনাবলী বিশ্বজগতেও দেখাবো এবং স্বয়ং তাদের নিজেদের মধ্যেও। পরিশেষে তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রতিভাত হবে যে, এ(তাওহিদ ও ইসলাম)-ই সত্য। -হা মিম সাজদা ৫৩।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore