ঘটনা শুরু করতে চাই ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক আক্রমণের পর থেকে যা প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেছে। রবার্ট ইনলাকেশ, যিনি একজন ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা, তিনি যুক্তি দেন যে পশ্চিমা গণমাধ্যম এই যুদ্ধে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছিল।
ইনলাকেশের মতে, ইরাক যুদ্ধের সময় পশ্চিমা গণমাধ্যম মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনমতকে প্রভাবিত করেছিল। তারা ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিল এবং যুদ্ধকে “বিশ্ব শান্তির জন্য” প্রয়োজনীয় বলে দাবি করেছিল।
মার্কিনিরা ইরাকিদের দুর্দশাকে উপেক্ষা করেছিল এবং যুদ্ধের প্রতি সমালোচনাকে দমিয়ে দিয়েছিল। মার্কিন হামলায় ১০ লাখেরও বেশি ইরাকি শহীদ হয়েছে। মিথ্যা অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালিয়েছিল—এটা এখন সম্পূর্ণ প্রমাণিত।
ঘটনা এমন দাঁড়ায় যে, ইরাকে মার্কিন হামলার প্রথম দুই মাসে ৭ হাজার ১৮৬ জনেরও বেশি ইরাকি শহীদ হয়েছে। আর সে সময় পশ্চিমা গণমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিজয়ের খবর প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকলেও পশ্চিমা গণমাধ্যম দুই দেশের সরকারের সমর্থনে কভারেজ দিতেই থাকে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের এই জঘন্য চেহারা আমরা আরো দেখতে পাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে আফগান,লেবানন সহ অন্যান্য যুদ্ধে।
আচ্ছা, তাহলে আজ তাদের অবস্থান কোথায় ? ততাকথিত সত্য খবর প্রচারক পশ্চিমা গণমাধ্যম, তারা কি আজও এই ঘৃণ্য অবস্থা ছাড়তে পেরেছে ? উত্তর হলো না! ওরা তো এখনো পশ্চিমা শাসক গুষ্টির পা চাটা গোলাম রয়েছে।
তাইতো দেখেন না গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে দখলদার ইসরাইল কর্তৃক হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে শহীদ করার পরেও (যার মধ্যে ৭০% হলো মহিলা এবং বাচ্চা/শিশু) ইউরোপীয় হলুদ মিডিয়া কেবল দখলদারদের সামান্য মানুষ মারা যাওয়া, তাদের বাড়ি ঘরে মুজাহিদীনদের রকেট পরা, সাইরের আতঙ্কে থাকা (বলে রাখা ভালো এই আক্রমণ কিন্তু দখলদারদের এত বছরের জুলুমের হামলার জবাবি পদক্ষেপ) এসবকে ইউরোপীয় হলুদ মিডিয়া অনেক বড়ো করে দেখাচ্ছে। অথচ এই জমিনই তাদের না, ফিলিস্তিনবাসীরা তো তাদের মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে এদের আশ্রয় দিয়েছিলো। অথচ নিজের জমিনে নিজেরাই দখলদার ইসরাইল কর্তৃক নির্যাতিত হওয়াকে পশ্চিমা নিকৃষ্ট মিডিয়া ততাকথিত জঙ্গিবাদ নির্মূলের অভিযানের নাম বলে প্রচার করছে।
পশ্চিমা গণমাধ্যম পরিণত হয়েছে গুজবের যন্ত্রে। তাদের মতে গাজা উপত্যকা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইজরায়েল সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। গাজা তীর, পূর্ব জেরুজালেম, ইরান, লেবানন, ইয়েমেন এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে আগ্রাসী পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা জাতীয় নিরাপত্তাই নিশ্চিত করছে। হামাসকে পুরোপুরি নির্মূলের এই প্রক্রিয়ায় শুধু মুসলমানই নয়, জাতিসংঘের কর্মী, হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও শহীদ হতে পারে। তারপরও সামান্য কিছু সংগঠনই আলোচনা করে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসন শান্তি ফিরিয়ে আনবে না। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এখন শুধু উপনিবেশবাদী আর ঔপনিবেশ টিকে আছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও অসংখ্য শিশুর শাহাদাতের বিনিময়ে কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হবে। গুজব রটাতে গিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম সত্য উপস্থাপন করছে না। পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে সমর্থন জানাচ্ছে। তারা যুদ্ধ করছে রাষ্ট্র ও গৃহহীন জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পুরো পৃথিবীকে মানবাধিকার, মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া পশ্চিমা শক্তিগুলোই এখন দ্বিমুখী আচরণ করছে। প্রাক-উপনিবেশবাদী যেকোনো রাষ্ট্রের সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র ও ভালো রাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমা সাংবাদিকদের হাতও রক্তে রঞ্জিত। ফিলিস্তিনের পক্ষের কথাগুলোকে তারা অবান্তর বা অপ্রয়োজনীয় হিসেবেই তুলে ধরেছে। কিছু ফিলিস্তিনিকে অবশ্য তাদের প্ল্যাটফর্মে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভারসাম্য এবং স্বচ্ছ সাংবাদিকতার স্বার্থেই তারা নাকি এসব সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘটিত বৈষম্য নিয়ে আলোচনার সুযোগ তাদের নেই। তারা শুধু শাহাদাৎ হওয়া স্বজনের জন্য আহাজারি করতে পারে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ পশ্চিমা সাংবাদিকতার অন্তিম সময়ের কথাই বলে যা তারা বিশ্বাসীর সামনে লুকায়িত রেখেছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে তথ্যের জন্য সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হয় না। পুরো বিশ্ব নিজ চোখে পশ্চিমা গণমাধ্যমের এই অবস্থান শনাক্ত করতে পারছে। পশ্চিমা রাজনীতিকরা ব্যর্থ হচ্ছেন এ নিয়ে এখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। কিন্তু পশ্চিমা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়া কিংবা উদারবাদী ধ্যানধারণা নিয়ে আলোচনা হয় না। গাজা সংকটে পশ্চিমা উদারবাদ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে পশ্চিমা সাংবাদিকতার স্বচ্ছতা। পশ্চিমা গণমাধ্যম এখনও প্রতিবেদনগুলোতে তথ্য এমনভাবে উপস্থাপন করছে যেন সাধারণ মানুষ শহীদের বিষয়টি অবধারিত বা কোনো কিছু করার ছিল না। শব্দের ব্যবহারে বোমাবর্ষণের নেতিবাচক অভিঘাতের বিষয়টি লুকিয়ে যাচ্ছে। সংঘর্ষের সময় নিউজরুমের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের দিকেই আমরা তাকিয়ে থাকি। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যম বর্ণবাদী ভূমিকা রাখছে। উপনিবেশবাদী এই সাংবাদিকতা থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই। যুদ্ধবিরতির দাবির বিষয়টি আজ তাদের জোরশোরে উপস্থাপন করা উচিত।
পরিশেষে বলতে চাই , কোনো মুমিন মুসলমানের জন্যই জায়নবাদী মিডিয়া এবং তাদের দুষর পশ্চিমা গণমাধ্যমকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না হউক সেইটি বড়ো বড়ো মিডিয়া হাউস যেমন : BBC, CNN, Fox News ইত্যাদি। কারণ তাদের নিউজের উপর অন্ধ বিশ্বাস করা তো আমাদেরকে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব তৈরী করা, এক ভাইয়ের প্রতি অন্য ভাইদের ঘৃণা তৈরী করা এসব করবে। সর্বশেষ এইসব নিউজের উপর অন্ধ বিশ্বাস আমাদের ঈমান এর উপর নিশ্চিত রূপে আঘাত হানবে।
তো শেষ অংশে এই সম্বন্ধীয় সুন্দর ১ টি কুরআনের আয়াত এবং হাদিস আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই :
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। এ আশঙ্কায় যে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে। ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা হুজরাত: ৬)।
এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট, সে যা শুনতে পায়, (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়।’ (মুসলিম)।