ইসলাম ইনসাইট

ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের মিডিয়া আগ্রাসনঃ টার্গেট বাংলাদেশ

 

ঘরের হালাল স্ত্রীর চাইতে পরনারীকে বেশি ভালবাসা এবং নিজ স্বামীর প্রতি নয় বরং পরপুরুষে আকৃষ্ট হওয়া; এসবের সংজ্ঞা হল পরকীয়া। যার ফলাফলস্বরূপ পরিবার গুলোতে নেমে আসে তালাকের যন্ত্রণা এবং সন্তানেরা হয় চির অভাগা। আবার পরকীয়া প্রেমিক/প্রেমিকার মাধ্যমে স্বামীকে অথবা স্ত্রীকে হত্যা করাও আজ খুব স্বাভাবিক ঘটনা। যা ভারতীয় টিভি সিরিয়াল গুলোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

 

যার বিষক্রিয়ায় এদেশের মুসলিম পরিবারগুলোতে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে যত্রতত্র। আমাদের প্রাপ্ত তথ্য মতে রাজধানী ঢাকায় প্রতি ৪০ মিনিটে ১টি তালাক সংঘটিত হচ্ছে এবং সারা দেশে হচ্ছে প্রতি ১মিনিটে একটি বিবাহবিচ্ছেদ। তারমানে প্রতিদিন ১৪৪০টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে। আর দেশের ৭৫ শতাংশ ডিভোর্সই দিচ্ছেন এদেশের ভারতীয় সিরিয়াল ও মুভির মূল টার্গেট ও দর্শক তথা নারীরা। অথচ এই তালাক হচ্ছে মহান আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজের একটি।

 

হিন্দি সিরিয়ালগুলোর আরেকটি ভয়ঙ্কর দিক হলো এতে দেখানো ননদ-বৌ কিংবা বৌ-শ্বাশুড়ীর মাঝে চলা সীমাহীন বিরোধ। ব্যাপারটি অনেকটা এমন যেন সংসারের স্ত্রীরা এবং শাশুড়িরা যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছে। কে কখন কাকে কিভাবে পরাজিত করবে এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। যার ভয়াবহ কুপ্রভাব পড়েছে এদেশের মুসলিম পরিবার গুলোতে। বৌ-শাশুড়ির এই বিরোধের জেরে মুসলিম পরিবারের ছেলেরাও আজ দিশেহারা। তারা কখনো তাদের স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের সাথে জুলুম করছে, কখনো আবার তারা স্ত্রীর উপর জুলুম করছে মায়ের অন্যায় আবদারে।

 

তার উপর দেবর-ভাবীর নির্লজ্জতাও ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর নিত্যদিনের ঘটনা। ভাবীকে অধিক সম্মান ও ভালবাসার টানে অথবা মজার ছলে জড়িয়ে ধরা এবং হালকা টাচ করা ইত্যাদি দেখানো হচ্ছে এসব নোংরা টিভি সিরিয়ালগুলোতে। এসব নোংরামিকে আবার এদেশের জ্ঞানপাপীরা স্মার্টনেস বলে প্রচার করছে। আসলে দেবর-ভাবীর এসব নির্লজ্জতা জেনা ও ব্যাভিচারের দ্বার খুলে দিচ্ছে, যাকে বলা হয় পারিপাবির পরকীয়া। ঠিক এভাবেই ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বিষমাখা জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

 

হিন্দুত্ববাদীদের আরেকটি মরনফাঁদের নাম হল ক্রাইমপেট্রোল। যেখানে ক্রিমিনাল ধরার কৌশল দেখানোর নামে এদেশের কিশোর ও তরুণদের অপরাধ কিভাবে করতে হবে তা শেখানো হচ্ছে যত্ন করে। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের অলিগলিতে ঘটছে গুম, খুন, হত্যা ও ধর্ষণ। পাশাপাশি গড়ে উঠছে অসংখ্য অগণিত মাদক কারবারি ও শত সহস্য কিশোর গ্যাং এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র। যারা অশান্ত করে তুলেছে পুরো দেশকে। অথচ এরাই হতে পারতো ইসলামের মহান সেবক।

 

তার উপর ভারতীয় এসব সিরিয়াল, শর্টফিল্ম ও মুভিগুলোতে প্রায়ই মহান মুসলিম শাসকদের নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে বর্বরতা ছড়ানো হিন্দুদের নায়ক হিসেবে দেখানো হয়। যাতে করে মুসলিম শিশুরা যেন ছোট থেকেই মুসলিমবিদ্বেষী হয়ে বড় হয়ে হিন্দুদের বন্ধুতে পরিণত হয়। এই যেমন “পৃথ্বীরাজ চৌহান” এবং “ছত্রপতি শিবাজী” সিরিয়ালকেই ধরুন, যেখানে মুসলিম সেনাপতি ও শাসক শিহাবুদ্দীন ঘুরী ও আলমগীরকে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এসব দেখে দেখে আমাদের মুসলিম শিশুরা তাদের মনের অজান্তেই আমাদের মহান এই পূর্বপুরুষদের ঘৃণা করতে শিখছে।

 

হিন্দুত্ববাদীদের তৈরিকৃত এসব সিরিয়াল, শর্টফিল্ম ও মুভিতে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি দেখানো হয় তা হল – মাটির তৈরি হিন্দুদের বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। আধাঘন্টার প্রচারিত একটি সিরিয়াল এনালাইসিস করলে দেখা যায় তার নূন্যতম ৮-১০ মিনিটই দেখানো হয় হিন্দুদের বিভিন্ন দেব-দেবী ও পূজা-অর্চনা তথা মহান আল্লাহ্ তা’আলার ভয়াবহ অবাধ্যতা। আর এদেশের জ্ঞানহীন অগণিত মুসলিমরাও দেদারসে দেখছে এসব কুফর ও শিরক। মনের অজান্তে তারা নিজেরাও জড়িয়ে পড়ছে এসব কুফর ও শিরকি কর্মকান্ডে। ঠিক এ কারণেই এদেশের পূজামন্ডপ গুলোতে এত লোকের ভীড়। খোদ কুষ্টিয়ার ইসলামী ইউভার্সিটিতেই এখন প্রশাসনের অর্থায়নে পূজার অনুষ্ঠান হচ্ছে।

 

মূলকথা হল, হিন্দুত্ববাদীরা চায় এদেশের মুসলিমরাও তাদের মত কুফর ও শিরকে লিপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ্র অবাধ্যতায় জড়িয়ে পড়ুক। যাতে করে আমরা অন্যায়, অপরাধ, জুলুম, নির্যাতন, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ঈমান ও আমলকে নষ্ট করে ফেলি এবং নিজেদের ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ ও দেশকে ধ্বংস করে ফেলি।

 

আর যখন আমরা এসব ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছি, তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা কাফির ও মুশরিকদের বিরোধিতার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছি। যার ফলশ্রুতিতে আমরা মুসলিমরা পরিণত হচ্ছি ধারহীন তরবারি ও ফলাবিহীন বর্শায়। ঠিক একারণেই কুফফাররা আজ আমাদের সামান্যতম ভয়ও পায় না, বরং আমরাই তাদের ভয়ে কাঁপছি প্রতিনিয়ত…

 

হিন্দুত্ববাদীরা খুব ভাল করেই জানে যে – মুসলিমদের বিভ্রান্ত ও বিপথগামী না করে পরাজিত করা যাবে না। তারা ইতিহাস থেকে এটাই শিখেছে। আমরা যদি নবী মুসা (আঃ) এর নেতৃত্বে বনী ইসরাইলের জেরুজালেম অভিযানের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখতে পাবো মুনাফিক বালআম বাউরার ঈমান ধ্বংসকারী চক্রান্ত। সে জালুতের দেয়া সম্পদ ও টাকা খেয়ে নিজের জাতিকেই ব্যাভিচারে লিপ্ত করে দেয়। যার ফলে বনী ইসরাইল জাতির কাছ থেকে ইসলামের মহান আমল তথা জিহাদ করার ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই চিরতরে দূর হয়ে যায়। তারা নবী মুসা (আঃ) কে তারা বলে বসে – “তুমি এবং তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ করো”।

 

ঠিক একারণেই হিন্দি ও ভারতীয় বাংলা ভাষায় প্রচারিত সিরিয়াল, শর্টফিল্ম, মুভি ও ক্রাইমপেট্রোল ইত্যাদি দিয়ে তারা এদেশের যুবসমাজকে ঈমানহীন ভোঁতা অস্ত্রে পরিণত করতে চাইছে। যাতে করে আমরা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারি। বরং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে নিজেরাই ছারখার হয়ে যাই। এটাই তাদের একান্ত চাওয়া।

 

তাই আসুন আমরা সাবধান হই, নিজেদের সন্তানদের ভারতীয় মিডিয়ার আগাসন থেকে বাঁচিয়ে রাখি এবং ইসলামের সুশিক্ষায় তাদের গড়ে তুলি। যাতে করে তারা আবারো ফিরিয়ে আনতে পারে ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ও বিজয়ী ইতিহাস। যদি আমরা এটি করতে পারি – ইনশাআল্লাহ্! এমন একদিন আসবে যখন এদেশের মুসলিমরা ভারতীয় গুন্ডাবাহিনীকে পিটিয়ে দেশছাড়া করবে।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore