ইতিহাস এমন এক সত্য। যা কখনো ভোলা যায় না, মুছেও ফেলা যায় না। আবার এই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখে তাকে অস্বীকারও করা যায় না। কথায় আছে – যে জাতি তার ইতিহাসকে ভুলে যায়, ধীরে ধীরে সে জাতির অস্তিত্বই বিলিন হয়ে যায়। তাই যে জাতি তার পেছনের ইতিহাস সংরক্ষণ করে না, পড়ে না ও চর্চা করে না; সে জাতি কখনো বুক টান করে পৃথিবীর বুকে দাঁড়াতেও পারে না। ঠিক এ কারণেই আমাদের পূর্বসূরি মনীষীগণ শত্রুর কয়েদখানায় বসেও ইসলামি ইতিহাসের দাস্তান লিখতে ভুলেন নি। কয়লার কালিতে, কাফনের কাপড়ে ইতিহাস লেখার ইতিহাস তো আমরা মুসলিমদেরই।
কিন্তু সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের (মুসলমানদের) সবচেয়ে বিশুদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ থাকা সত্ত্বেও। আমরা আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানি না, এমনকি জানার চেষ্টাও করি না। আমাদের ছিল এক সোনালী অতীত। যখন দুনিয়ার বুকে ছিল আমাদের গৌরবময় অস্তিত্ব, এছাড়াও ছিল বিজয়গাথা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আমরা দুনিয়াকে উপহার দিয়েছিলাম খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রদি.), সালাহউদ্দীন আইয়ুবী (রাহিঃ), মুহাম্মাদ বিন কাসিম (রাহিঃ), সুলতান মাহমুদ আল-ফাতেহ (রাহিঃ), সুলতান মাহমুদ গাজনবী (রাহিঃ) এর মতো মহাবীর। আমরা বিজয় করেছিলাম ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া।
আর আজ যখন আমাদের মুসলিম যুবকদের সামনে সেই সব মহান বিজয় ও সেই সব মহান মহাবীদের কথা আলোচনা করা হয়, তখন আমরা বিস্মিত হই এবং বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বলে আনমনে প্রশ্ন করি – আসলেই কি মুসলমানরা ইউরোপ শাসন করেছিলো? আসলেই কি এমন মহাবীরগণ আমাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন? এসবের কারণ হল আমরা মুসলিমরা আমাদের সোনালী ইতিহাস একেবারেই ভুলে গেছি। আর একারণেই পৃথিবীতে আজ আমাদের এই অস্তিত্বসংকট।
আজ আমরা আসলেই আমাদের অস্তিত্বকে হারাতে বসেছি। তার কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফেল (উদাসীন)। আমরা সেই ইতিহাস জানি না, যা আমাদের পূর্বসূরিগণ সংরক্ষণ করে গিয়েছেন। তাই জানার আগ্রহ থেকে কখনো নিজেকে প্রশ্নও করি না যে, এই গৌরবময় ইতিহাস আমরা কিভাবে অর্জন করেছিলাম? আর কি কারণেই বা তা হারালাম। এমন কি ছিল যার ফলে আমাদের উত্থান হয়েছিলো? আর এমন কি হয়েছিল, যার ফলে আমাদের পতন হয়েছিল? চলবে…