র্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জুলুম ও নির্যাতন যাদের ওপর চালানো হচ্ছে, তারা হচ্ছে নিপীড়িত ফিলিস্তিনের মুসলিমরা। গত ৭৫ বছর ইসরাইল ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মুসলিমকে গণহত্যা করে শহীদ করেছে।
কেবল বিগত ২০০ দিনেই সন্ত্রাসী জায়নবাদী ইহুদীরা গণহত্যা চালিয়ে শহীদ করেছে প্রায় ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে, যাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি শিশুদের সংখ্যাই প্রায় ২০ হাজার। প্রতিদিনই চলছে এই হত্যাকান্ড, যার সাক্ষী আমরা পুরো পৃথিবীর মানুষ। বিশেষ করে আমরা মুসলিমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি এই হত্যাকান্ড, যেন আমাদের কিছুই করার নেই।
এদিকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের ওপর চালানো হচ্ছে ভয়াবহ নির্যাতন ও নিপীড়ন। গোসত খাওয়া কিংবা গোসত বহন করার মত ঠুনকো অজুহাতেই উগ্র হিন্দুরা ভারতের মুসলিমদের পিটিয়ে শহীদ করে দিচ্ছে যখন তখন।
মুসলিমদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেও বাধ্য করা, পর্দানশীন মুসলিম নারীদের রাস্তায় হেনস্তা করা হিন্দুত্ববাদী ভারতের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এছাড়াও হিন্দুরা ইচ্ছে হলেই মসজিদের ইমামদের হত্যা করছে, নামাজ পড়া অবস্থায় সাধারণ মুসল্লিদের লাথি মারছে এবং মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণ করছে আমাদের চোখের সামনেই। আর হিন্দুত্ববাদী ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর তো হল চির মজলুম এক মুসলিম ভূমির নাম।
আমাদের আরেক পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। আরাকানের অধিবাসী এই মুসলিমরা শত শত বছর ধরে নির্যাতিত হচ্ছে আমাদের চোখের সামনেই। যেন কান পাতলেই শোনা যায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের আহাজারি।
অবাক করা বিষয় হলো, পৃথিবীবাসী শুধু দেখেছে কিভাবে হিংস্র বৌদ্ধরা এই রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়েছে, কিভাবে তাদেরকে জবাই করেছে, কিভাবে তাদের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকেও কেটে টুকরো করেছে। পৃথিবীবাসী এও দেখেছে যে কিভাবে এই মুসলিমদের একটির পর একটি গ্রাম পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে।
কিছুদিন পরপরই হিংস্র বৌদ্ধদের বিভিন্ন গ্রুপ এসে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালাচ্ছে ভয়ঙ্কর গণহত্যা। তাই নিজেদের জীবন বাচাতে রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশ দেশে এসে বারবার আশ্রয় নিয়েছে।
🔗রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন : রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমস্যা সমাধানের সময় এখনই
বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর সংঘটিত এসব বর্বরোচিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে এদেশের মুসলিমরা মাঝে মাঝে কিছু মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। আর দু’দিন পরেই সবকিছুকে স্বাভাবিক বলে নিজেদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। অবস্থা দেখে এটাই প্রমাণ হয় যে, আমরা মুসলিমরা এদেশের তথাকথিত সুশীল ও চেতনাধারী কর্তাব্যক্তি এবং পথভ্রষ্ট আলেম নামধারী জালিমদের শিখিয়ে দেয়া জাতীয়তাবাদী বুলিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
তারা বলে বিশ্বব্যাপী মুসলিম নির্যাতন সেসকল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা আমাদের বুঝাতে চায় যে – ভারতে মুসলিমরা নির্যাতিত হলে তাতে আমাদের কি? মায়ানমারে মুসলিমরা নির্যাতিত হলে আমাদের কি করার আছে? বিষয়টি কি আসলেই এমন? এক মুসলিমদের উপর নির্যাতনে চুপ থাকাই কি অপর মুসলিমের কাজ? কখনোই না!
হাদিসে রাসূলে এসেছে “সকল মুসলমান একটি দেহের মতো। যখন তার চোখে যন্ত্রণা হয়, তখন তার গোটা শরীরই তা অনুভব করে। যদি তার মাথা ব্যথা হয়, তখনও গোটা শরীরই তা অনুভব করে”। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৬৮৭)।
তাই আসুন আমরা নিরেট জাতীয়তাবাদী না হয়ে পরিপূর্ণ মুসলিম হই এবং ভন্ডদের পরিত্যাগ করে নিজেদের সবটুকু দিয়ে নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাঁড়াই। নয়তো হাশরের মাঠে লজ্জিত, অপমানিত ও শাস্তি পাওয়া ছাড়া কোন গতি থাকবে না।