ক্রুসেড! যে নামটি শুনলেই মনের কোণে ভেসে ওঠে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত একদল খ্রিষ্টানদের কথা। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা ছিল চরমভাবে ঐক্যবদ্ধ, অথচ তারা ছিল ভিন্ন ভিন্ন দেশের ও জাতির অন্তর্ভুক্ত। যার কাছে যা ছিল তা নিয়েই তারা যুদ্ধে নেমে এসেছিল সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রাহিমাহুল্লাহর মত যুগের সকল মুসলিম সেনানীর বিরুদ্ধে।
এই ক্রুসেডারদের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল কেবলই একটি, আর তা হল – পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামকে চিরতরে মুছে ফেলা। যেমন করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
یُرِیۡدُوۡنَ لِیُطۡفِـُٔوۡا نُوۡرَ اللّٰهِ بِاَفۡوَاهِهِمۡ وَ اللّٰهُ مُتِمُّ نُوۡرِهٖ وَ لَوۡ كَرِهَ الۡكٰفِرُوۡنَ ﴿۸﴾
তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা (তা) অপছন্দ করে। (সূরা সফ – ০৮)
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই প্রশ্ন করে – ক্রুসেড আসলে কখন শুরু হয়েছিল? আর কখন থেকেই বা ক্রুসেডাররা ইসলামের প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠলো? কখন থেকে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে?
এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই হবে একটি, আর তা হল নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর যুগ থেকেই। নবীজির জীবদ্দশা থেকেই ক্রুসেডেররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে, যা শুরু হয়েছিল মুতার যুদ্ধের মাধ্যমে। যা সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর সময়ে এসে চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।
হিজরী সপ্তম শতাব্দীতে তাতারিদের উত্থানের যুগে পুরো পৃথিবী জুড়ে মুসলিমরা যেমন ছিল একক পরাশক্তি, ঠিক তেমনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত প্রধান শত্রুপক্ষ ছিল খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত ক্রুশেড শক্তি। তৎকালীন পৃথিবীর পশ্চিম ইউরোপ ছিল তাদের প্রধান কেন্দ্র। ঠিক যেমন আজকের আমেরিকা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত ক্রুসেড বাহিনীর কেন্দ্র।
তবে পশ্চিম ইউরোপ ক্রুসেডারদের কেন্দ্র হলেও অন্যান্য অঞ্চলের ক্রুসেডাররা হাত গুটিয়ে বসে ছিল না মোটেই। তৎকালীন সময়ের ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আর্মেনিয়া ও ইটালির খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা একদিকে যুদ্ধ করছিল সিরিয়া ও মিশরের মুসলমানদের বিরুদ্ধে। আর অপরদিকে স্পেন ও পর্তুগালের খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা স্পেনের মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলো।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষ্যণীয় ব্যাপারটি হচ্ছে – যখনই মুসলিমদের বিরোধিতার বিষয় আসে, তখনই আমরা দেখতে পাই পৃথিবীর সকল খ্রিষ্টান ও ইহুদীরা ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ। আজও তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চরমভাবে ঐক্যবদ্ধ। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের যে বিদ্বেষ তা ঠিক আগের মতই।
অথচ বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিমরাই এই চরম বাস্তবতাকে ভুলে গেছে, যেমন করে তারা ভুলে গেছে তাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তাইতো তারা মুসলিমদের চিরশত্রু ক্রুসেডারদেরই গ্রহণ করছে পরম বন্ধুরূপে। এই ক্রুসেডারদের কল্যাণকামী হতে গিয়ে তারা ভুলে গেছে পৃথিবীর সকল মজলুমদের। বড়ই বেদনাদায়ক এ লজ্জা।
অথচ কুফফাররা যে মুসলিমদের বন্ধু নয় বরং চিরন্তন শত্রু তা মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা পবিত্র কুরআনেই বলে দিয়েছেন…
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡیَهُوۡدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوۡلِیَآءَ ۘؔ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّهُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاِنَّهٗ مِنۡهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۵۱﴾
হে মু’মিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না, তারা তো একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে নিশ্চয়ই সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথ প্রদর্শন করেননা। (সূরা মায়েদা ৫১)
অন্য আয়াতে আমাদেরকে সতর্ক করে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন,
وَ لَنۡ تَرۡضٰی عَنۡکَ الۡیَهُوۡدُ وَ لَا النَّصٰرٰی حَتّٰی تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمۡ…..
ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা তোমার প্রতি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের আদর্শকে গ্রহণ কর। (সূরা আলে ইমরান ৫১)
হে প্রিয় মুসলিম! তাই আসুন আমরা জাগ্রত হই। নিজেদের ভূলন্ঠিত আত্মপরিচয়কে নতুন করে জাগিয়ে তুলি। শত্রুকে শত্রু আর বন্ধুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি আর মজলুমদের সাহায্যকারী হই। নয়তো হিজরী সপ্তম শতাব্দীর তাতারি ফিতনার ন্যায়, হিন্দুত্ববাদী ফিতনা ধেয়ে আসবে আমাদের দিকে অতি শীঘ্রই।