ইসলাম ইনসাইট

ভারতের ইন্ধনে পাহাড়ে প্রতিবিপ্লবের আশংকা !!

সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গত ৫ ই আগষ্ট খুনি হাসিনার পতন হয়েছে। দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিজয় এটি। কিন্তু আমরা এই বিজয়কে এখনো চুড়ান্ত বিজয় বলতে পারিনি। কারণ, বিগত ১৫ বছরে থাকা সকল সেক্টরে হাসিনার দালালেরা নানান কায়দায় দেশকে এখন অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে। সেনাঅভূথ্যান, সংখ্যালঘু কার্ড, জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার, রিক্সাচালকদের কর্মবিরতিসহ নানান বিশৃঙ্খলা তৈরি করে প্রতিবিপ্লবের পরিবেশ তৈরির চেষ্টায় রয়েছে এসব ভারতীয় দালালরা।

 

ছাত্র – জনতা এসব ষড়যন্ত্র খুব সফলতার সাথে নসাৎ করে দিতে পেরেছে্। কিন্তু আশংকার বিষয় হলো পাহাড়েও নতুন করে ষড়যন্ত্র চলছে যাতে পাহাড়ীরা বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ইতিমধ্যে সেখানকার সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপদের সক্রিয় হওয়ার আভাস – ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আর এখানে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ভারত প্রধান ভূমিকা রাখছে।

 

৭৫’ এর ১৫ ই আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র করেছে তারমধ্যে অন্যতম ছিলো পাহাড়ে অশান্তি তৈরি করা। সেজন্য শান্তিবাহিনীকে সকল ধরনের সহায়তা দিয়েছিলো ভারত। এবারও ঠিক তাই করার চেষ্টা করছে।

 

কোটাআন্দোলনের শুরুতেই এর বিরোধিতা করে আসছিলো পাহাড়িরা। কারণ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু সারাদেশে আন্দোলনের তীব্রতা দেখে পাহাড়ী শিক্ষার্থীরা একদম চুপ হয়ে যায়। ৫ তারিখে হাসিনার পতনের পর হঠাৎ করেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে পার্বত্য জেলার নৃগোষ্ঠী কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে দেয়ালে দেয়ালে বিতর্কিত স্লোগান সম্বলিত গ্রাফিতি আঁকতে শুরু করে। পাশাপাশি নানা রাজনৈতিক দাবি নিয়েও মিছিল – মিটিং করে।

 

ইতোমধ্যে পাহাড়ের কিছু চিহ্নিত কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে সংঘটিত করছে এই বলে যে, ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে রাষ্ট্র তাদের সাথে বৈষম্য করছে। তাই দেশে বৈষম্যবিরোধী বিপ্লব সফল হওয়ার পর তারা এখন এই বৈষম্যের অবসান চায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের বিপুল পরিমাণ ভূমি দখল হয়ে গেছে, সেসব ভূমি ফেরত না দিয়ে তাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে, এখন তারা এই বৈষম্যের অবসান চায়।

 

সামরিক বাহিনীকে বৈষম্যের প্রতীক বানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তাদের প্রত্যাহারের পুরনো দাবি জোরদার করছে। একই সাথে সরকারি চাকরিতে আবারো ৫ শতাংশ কোটা নিশ্চিত করে বৈষম্য দূর করার দাবি জানাচ্ছে! এসব দাবিতে নতুন করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার মতো লোকের অভাব পার্বত্য চট্টগ্রামে কখনোই ছিল না। এখনো আছে, বরং আগের চেয়ে বেশিই আছে।

 

এখন যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে দেশে যদি সত্যিই অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে অন্তবর্তী সরকারের পক্ষে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, এখানে ভারতের স্বার্থের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোরও স্বার্থ রয়েছে। তা হলো একটি “খ্রিষ্টান রাষ্ট্র” গঠন যার পরিকল্পনা ১৯৪৭ সাল থেকেই ব্রিটিশদের ছিলো।

 

নানান আন্তর্জাতিক এনজিও, দাতা সংস্হা পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে থাকে ৷ খ্রিষ্টান মিশনারী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাহাড়িদের ধর্মান্তরিত করার কাজেও তারা সহযোগিতা করে থাকে। দু:খের বিষয় হচ্ছে, তাদের কার্যক্রমকে সমর্থনকারী সুশীলদের বেশিরভাগই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে !!!

 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা হলো, শান্তিবাহিনীর প্রধান সন্তু লারমাসহ অন্যান্য পাহাড়ি নেতারা নিজেদেরকে সবসময় আদিবাসী বলে পরিচয় দেন। এর কারণ, ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ‘আদিবাসী’ বিষয়ক যে ঘোষণা গৃহীত হয়েছে, তাতে এটা নিশ্চিত যে,

কোনো জনগোষ্ঠি যখন ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে তারা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার পাবে, সেখানকার ভূমি উপর তাদের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ থাকবে, খনিজ সম্পদ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সর্বোপরি সেনাবাহিনীর অবস্থান করা না করাও হবে তাদের ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বলে সেখানে কিছু থাকবে না, সবকিছুই হবে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিত্তিতে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে জাতিসংঘ সেখানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে।

 

তাই নিজেদের স্বার্থরক্ষার্থে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সন্ত্রাসী সন্তু লারমা শান্তিবাহিনী গঠন করেছিলো। ধাপে ধাপে অস্ত্রবিরতি, সরকারের সাথে ধারাবাহিক আলোচনা, ত্রিশহাজার বাংগালী হত্যা, চুক্তি সবই তাদের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে ২৫ বছর ধরে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সন্তু লারমা পাহাড়ে গুম, খুন, চাঁদাবাজিসহ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মদদ দিচ্ছে। হাসিনার পতনের পর ভারতের বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবের বহি:প্রকাশকে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore