
মুসলিমদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ ও সংঘাত তৈরির লক্ষ্যে পৃথিবীর তথাকথিত মোড়লরা বর্তমানে যেমন নানান পরিকল্পনা ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনটি তারা করেছিল অতীতেও।
ইসলামি শাসনের সেই সোনালী যুগেও আমরা এর প্রতিফলন দেখেছি স্পষ্টভাবেই। এরই জের ধরে নানা সময় মুসলিমরা পারস্পরিক সংঘাত ও যুদ্ধে জড়িয়ে যেতেও আমরা দেখেছি। শত্রুদের প্রোপাগান্ডার বশবর্তী হয়ে পরস্পর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার কারণে বৃহত্তর স্বার্থে মুসলমানদেরই ক্ষতি হয়েছে বারবার। ইতিহাসে এর উদাহরণ অসংখ্য ও অগণিত।
সম্প্রতি হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার মধ্য দিয়ে লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। লাগাতার বিমান হামলার পর আজ লেবাননে স্থল আক্রমণের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে দিয়ে প্রায় সহস্রাধিক বেসামরিক মানুষ শহীদ হয়েছে।
কিন্তু যুদ্ধ বিশ্লেষকদের ধারনা মতে,
এই যুদ্ধকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভবপর নয়। কারণ, ইতোমধ্যেই ইসরায়েল বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে যু্দ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। তারা গাজা ও লেবাননের পাশাপাশি পশ্চিম তীর, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়ামেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে একই সময়ে লড়াই করে যাচ্ছে, যা আধুনিক যুদ্ধের স্ট্র্যাটিজি অনুযায়ী খুবই আত্মঘাতী।
একদিকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ নানা আন্দোলনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশসমূহের কূটনৈতিক চাপে এমনিতেই ইসরায়েলের অবস্থা নাজেহাল। সুতরাং এটা বোধগম্য যে, ইসরায়েল পরাজয়ের ভয়ে মরণকামড় দিয়ে যাচ্ছে। যা মুসলিমদের বুঝা উচিৎ এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ভুলে সকল মুসলিমদের চিরশত্রু ইসরায়েলকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য একযোগে কাজ করা।
আমাদের মনে রাখতে হবে,
ইসরায়েলের এই নাজুক পরিস্থিতিতেই পশ্চিমা মোড়লরা বিভিন্ন দেশে শিয়া-সুন্নী সংঘাত উসকে দেয়ার প্রোপাগান্ডা হাতে নিয়ে ফেলেছে। তাদের এসব প্রোপাগান্ডা সবাইকে গেলানোর জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা মিডিয়াগুলো। সাবধান, এদের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।
এই বিষয়ে আমরা বলতে চাই, আমরা শিয়াবাদকে পছন্দ বা সমর্থন কোনটাই করি না। সেই সাথে আকিদা ও কৌশলগত বিষয় দুটোকে আমরা এক করেও দেখিনা।
কৌশলের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সমর্থন বিস্তৃত পরিসরে করতে পারি কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে এমনটা আমরা করি না। কুদস বিজেতা সালাহউদ্দীন আইয়ুবির ইতিহাস আমরা জানি। তৎকালীন শিয়াপন্থী ফাতিমীদের সাথে তিনি যুদ্ধে জড়ান নি, বরং কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি বাইতুল মাকদিস বিজয় করেছেন।
আমাদের আজকের পরিস্থিতিও একই রকম। সুতরাং আমাদেরও উচিত হবে সালাহউদ্দীন আইয়ুবির পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিশ্বের কুফফারদের রুখে দেয়া।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই মুহূর্তে পৃথিবী দুটি ভাগে বিভক্ত। যার একদিকে ইসলাম এবং অপরদিকে গ্লোবাল থ্রি নেক্সাস। অর্থাৎ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শক্তি, ক্রুসেডার শক্তি এবং জায়োনিজম বা ইহুদিবাদ। এই তিন শক্তিই একযোগে কাজ করে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে ইসলামকে পুরোপুরিভাবে উপড়ে ফেলতে।
চলমান গাজা ও লেবানন যুদ্ধে বর্বর ইসরায়েলকে সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এই “থ্রি নেক্সাসে” এর অন্তর্ভুক্ত সকল দেশ।
সুতরাং এই মুহূর্তে আমরা যদি কৌশল এবং আকিদার মাঝে পার্থক্য করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে আকিদা তো দূরের কথা পৃথীবিতে আমাদের অস্তিত্বই বাকি থাকবে না। তাই আমাদের জন্য আবশ্যক হলো, আকিদাগত মতপার্থক্য একপাশে রেখে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে এই গ্লোবাল থ্রি নেক্সাসের শক্তিকে রুখে দেয়া।