ইসলাম ইনসাইট

মাহফুজ আব্দুল্লাহ: তথাকথিত মাস্টারমাইন্ডের আড়ালে নিকৃষ্ট এক ইসলাম বিদ্বেষী (১ম পর্ব)

ইসলামবিদ্বেষী মাহফুজ আব্দুল্লাহ

বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ওরফে মাহফুজ আব্দুল্লাহ । দালাল মিডিয়া ইতিমধ্যে তাকে তথাকথিত মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। অথচ মাহফুজের ভাবখানা এমন যে—সে-ই একমাত্র মাস্টারমাইন্ড যে ছাত্রআন্দোলনে মূল ভুমিকা রেখেছিলো। সম্প্রতি জাতিসংঘে গিয়ে ড. ইউনুস সাহেবও তাকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দেন।

 

এই মাহফুজ আলম প্রকাশ্যে আসার পর থেকে একের পর এক ইসলাম নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে শুরু করে নানাভাবে এদেশের ইসলামপন্থীদেরকে না-মানুষ ট্যাগ লাগানো শুরু করে।  ইনিয়ে বিনিয়ে ছাত্রআন্দোলনে ভূমিকা রাখা ধর্মপ্রাণ মুসলিমদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

 

সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সে বলে,

‘সমাজ, সংস্কৃতি, আচার, অভ্যাস হলো ধর্মের পরিসর। ধর্ম থেকে রাষ্ট্রে কেবল একটাই বিষয় আসতে পারে, তাহলো নৈতিকতা।’

এই কথার মাধ্যমে সে ইসলামী জীবনব্যবস্থার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নৈতিকতার দিক তুলে ধরলো, যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করল।

 

অথচ,আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,   اليوم أكملت لكم دينكم و اتممت عليكم نعمتي و رضيت لكم الإسلام دينا

অর্থাৎ আমি আজ তোমাদের জন্য দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম। এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছি, এবং  ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে দিয়েছি।  (মায়েদা : ০৩)

 

এছাড়াও হাদিসে নবিজী সা. ইসলামকে ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত করেছেন। সিরাতের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখব, কুরআনের বিধানকে সামনে রেখে নবিজী সা. জীবদ্দশায় মদিনায় একটি সফল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

 

অথচ কথিত বুদ্ধিজীবি মাহফুজ আবদুল্লাহদের কাছে ইসলাম শুধু নৈতিকতার ধর্মই৷ এরা পশ্চিমাদের থেকে ধার করা মেয়াদোত্তীর্ণ মতবাদকে ব্যবহার করে ইসলামের সামগ্রিক ও সর্বকালীন রূপকে অস্বীকারের চেষ্টা করছে৷

 

মাহফুজ সাক্ষাৎকারে আরো বলে,

‘কিন্তু রাষ্ট্র যদি ইসলামকে জায়গা করে দিতে চায়, তাহলে তো ইসলামই সীমিত ও নিপীড়নের অনুষঙ্গ হয়ে যাবে। ইসলামি উম্মাহর ধারণা তো বিশ্বজনীন। জাতিরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটা খাটে না। বিদ্যমান জাতিরাষ্ট্রের কাঠামোয় ইসলাম বা শরিয়াহ বাস্তবায়ন অসম্ভব।

 

সে কারণে এ প্রশ্নের মীমাংসা করতে গিয়ে আলেমরা বলেছিলেন, শরিয়াহ মুখ্য নয়, প্রয়োজন হলো মাকাসিদ-উশ শরিয়াহ, যার মূল কথা জীবন-মালের হেফাজত করা। এবার তাহলে আপনি মানবাধিকারের আদিকল্পে প্রবেশ করলেন।’

 

রাষ্ট্র কেন ইসলামকে জায়গা করে দিবে ? ইসলাম কি রাষ্ট্রের কাছে নির্ভরশীল? ইসলাম নিজেই একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা। আর ইসলাম কিভাবেই বা নিপীড়নের অনুসঙ্গ হয়, যেখানে ইসলামের মূল কনসেপ্টই হল নিপীড়নের বিরুদ্ধে? বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ছড়িয়ে পড়ার বড় একটি উদ্দেশ্যই ছিল, পৃথিবী থেকে জুলুম ও নির্যাতনের মূলোৎপাটন করে দেয়া। তাহলে “ইসলাম নিপীড়নের অনুসঙ্গ” এই কথাটি মূলত মাহফুজ আব্দুল্লাহ কর্তৃক ইসলামের বিরুদ্ধে ভয়ংকর অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, ইসলাম নিজেই একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ও স্বতন্ত্র বিশ্বব্যবস্থা। আর জাতিরাষ্ট্র তো বিশ্বের বাহিরের কিছু নয় যে এটা ইসলামি উম্মাহর সাথে যায় না।

 

ইসলাম কোনো কাঠামোর কাছে নির্ভরশীল বা দায়বদ্ধ না, ইসলামের নিজস্ব কাঠামো রয়েছে। মাকাসিদুশ শরীয়াহ এর উদ্দেশ্যই যেখানে শরিয়ার প্রতিষ্ঠা করা, সেখানে জটিল শব্দের মারপ্যাচে সে বুঝাতে চাচ্ছে যে – মাকাসিদুশ শারিয়াহ মানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ব্যতীত ভিন্ন কিছু। ইসলামের কাজ কেবল জান-মালের হেফাজত করা না, ইসলামের মূল লক্ষ্য আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়আলার আদেশ-নিষেধের বাস্তবায়ন। আর আল্লাহর আদেশের মুখ্য বিষয় হলো আদল ও ইহসান। (১ম পর্ব সমাপ্ত)

 

২য় পর্বের লিখা পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন !!

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore