ইসলাম ইনসাইট

উম্মাহর মহীরুহ শহীদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার রহঃ

ইয়াহইয়া সিনওয়ার

ইয়াহইয়া ইব্রাহিম হাসান সিনওয়ার। যার নাম শুনলেই তাবৎ বিশ্বের কুফফারদের ঘুম হারাম হয়ে যেতো। সেই তিনি গতকাল সন্ত্রাসী ইসরাইলের সাথে বীরত্বের সাথে লড়াই করে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রজিউন।

 

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের উপর সংগঠিত ‘নাকাবা’ পর সন্ত্রাসী ইসরাইলের আগ্রাসনে মুখে আস্কালন শহর থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে খান ইউনিসে আশ্রয় নেয় একটি পরিবার। সেই পরিবারেই ১৯৬২ সালে শরণার্থী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন সিনওয়ার। সন্ত্রাসী ইসরাইলের বর্বরতা দেখে দেখে বড় হতে থাকেন ছোট্ট সিনওয়ার। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হিসেবে ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য কাজ করতে থাকেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে হামাস প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আহমাদ ইয়াসিন রহঃ এর অধীনে হামাসের সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠায় অংশ নেন। তার এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সন্ত্রাসী ইসরাইলের চোখে অনেক হুমকি হিসেবে দেখা দেয়।

 

ফলস্বরুপ তাকে বারবার এবং দীর্ঘসময় কারাবরণ করতে হয়। কারাগারে থাকাবস্থায় তিনি হয়ে উঠেন এক অদম্য সাহসী নেতা। ইসরাইলী কারাগারে অন্যায়ভাবে আটক থাকা বন্দিদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে তিনি নেতৃত্ব দেন। বিশ বছরেরও বেশী সময়ে কারাগারে থাকাবস্থায় হিব্রু ভাষা শিখার পাশাপাশি অনেক বই ও উপন্যাস লেখেন তিনি। ২০১১ সালে মুক্তির পর হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৭ ও ২০২১ সালে গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হিসেবে মিশরের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের নানা চেষ্টা তিনি করেছিলেন।

 

২০২২ সালের শেষের দিকে গাজায় এক উন্মুক্ত সমাবেশে সিনওয়ার এবং অন্যান্য হামাস নেতারা সন্ত্রাসী ইসরাইলকে সরাসরি সংঘাতের পূর্বাভাস দেন। ২০২৩ সালে তুফানুল আকসা শুরুর আগেও এমন থ্রেট দিয়েছিলেন সিনওয়ার রহঃ

 

৭ ই অক্টোবরের পর ইয়াহইয়া সিনওয়ার আবারো আলোচনার টেবিলে আসেন। তাকে এবং হামাসের সামরিক প্রধান মুহাম্মাদ দেইফ হাফিঃ কে তুফানুল আকসার মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উল্লেখ করে সন্ত্রাসী ইসরাইল। এমনকি সিনওয়ার রহঃ কে হত্যার জন্য মোটা অংকের টাকার পুরষ্কারও ঘোষণা করে ইসরাইল!!

 

২০২৪ সালের ২০ মে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ইসমাইল হানিয়া রহঃ শহীদ হলে হামাসের প্রধানের দায়িত্ব তার উপর চলে আসে।

 

২০২৪ সালের ১৭ ই অক্টোবর। রাফাহ শহরে সিনওয়ার রহঃ সহ তিনজন হামাস মুজাহিদীন টহল দিচ্ছিলেন। এমন সময় সন্ত্রাসী ইসরাইলের টহল টিম ট্যাঙ্ক তাদেরকে লক্ষ্য করে ওপেন ফায়ার করলে দুইজন সেখানে শহীদ হন। সিনওয়ার একাই তখন AK-47 নিয়ে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে থাকেন। ফায়ার করতে করতে একপর্যায়ে তিনি একটি ধ্বংসস্তুপ ভবনে আশ্রয় নেন।

 

ঠিক তখন ভবনের চারদিক ঘিরে ফেলে সন্ত্রাসী ইসরাইল। ওদের উপস্থিতি টের পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে তিনি উপরের তলায় গিয়ে লুকিয়ে থাকলেন। উপরে ওঠার মুহূর্তেই ওরা আবার তাঁকে লক্ষ করে ট্যাংক চালায়। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং একটা হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তাঁর জায়গায় গিয়ে বসলেন। এরমধ্যে সন্ত্রাসীবাহিনী তোড়জোড় করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। তিনি তা টের পেয়ে এক হাতেই দুটো হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন ওদেরকে টার্গেট করে। এতে আহত হবার পাশাপাশি তারা সাহস হারিয়ে ফেলল। যে গতিতে তারা উপরে ওঠার চেষ্টা করেছিল তারচেয়ে দ্বিগুণ গতিতে ভয়ে পুনরায় নিচে নেমে গেল।

 

বাহিরে তখন সন্ত্রাসীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে। সন্ত্রাসীরা সিদ্ধান্ত নিলো ভবনে ড্রোন প্রবেশ করিয়ে তাঁর অবস্থান শনাক্ত করবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রোন ব্যবহার করল তারা। তিনি কর্তিত ও রক্তাক্ত হাত নিয়ে দেখছিলেন সব। এক হাতে ছিল লাঠি। যখন ড্রোন তাঁর কাছাকাছি আসল, ঠিক তখনই তিনি ড্রোনকে উদ্দেশ্য করে লাঠি নিক্ষেপ করলেন। তাঁর এই অবস্থান শনাক্ত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে পুরো বিল্ডিং গুড়িয়ে দেওয়ার মতো শক্তিশালী ট্যাংক শেল্ড ব্যবহার করল সন্ত্রাসীরা। হামলার পর শাহাদাতের পেয়ালা পান করে অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক অভিযাত্রা শেষ করলেন। আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা শহীদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার রহঃ কে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore