মুসলিম বিজ্ঞানীদের উথান এবং তাদের প্রভাব
ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা মধ্যযুগের মুসলিম বিজ্ঞানীদের অসামান্য অবদান সম্পর্কে জানতে পারি। অষ্টম থেকে চৌদ্দ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালকে ইসলামের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত, দর্শনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়। জ্ঞানার্জন ও গবেষণাকে ইসলামে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা এই যুগের বিজ্ঞানীদের কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে।
০১. ইবনে সিনা (আবু আলি হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা)
ইবনে সিনা ছিলেন ইসলামী স্বর্ণযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও লেখক। তিনি ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্তানের আফশানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার রচিত “আল-কানুন ফিৎ তিব্ব” (চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়মাবলী) গ্রন্থটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এটি মধ্যযুগে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ইবনে সিনার চিন্তা ও গবেষণায় মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞান পূর্ণতা পেয়েছিল, যার প্রভাব আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিদ্যমান।
০২. আবু রায়হান আল-বিরুনি
আল-বিরুনি ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, ভূগোলবিদ, ঐতিহাসিক, দার্শনিক এবং ভাষাতত্ত্ববিদ। ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান তুর্কমেনিস্তানে জন্মগ্রহণকারী আল-বিরুনিকে বলা হয় “ইসলামের লিওনার্দো দা ভিঞ্চি”। তার রচিত “তাহকিক মা লিল হিন্দ” গ্রন্থে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি, ধর্ম, এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে।
০৩. মুহাম্মদ ইবনে মূসা আল-খাওয়ারিজমি
আল-খাওয়ারিজমি ছিলেন পারস্যের (বর্তমান ইরান) বিখ্যাত গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিদ এবং ভূগোলবিদ। ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী আল-খাওয়ারিজমি “বীজগণিতের জনক” হিসেবে পরিচিত। তার রচিত “কিতাব আল-মুখতাসার ফি হিসাব আল-জাবর ওয়াল-মুকাবালা” গ্রন্থটি বীজগণিতের প্রথম স্বতন্ত্র গ্রন্থ। “আলগোরিজম” শব্দটি তার নাম থেকে উদ্ভূত, যা আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানে “অ্যালগরিদম” হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই পর্বে আমরা মধ্যযুগের তিনজন বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় পেলাম। বাকী পর্বগুলোতে আমরা আরো অনেক বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও তাদের কর্মসমূহ সম্পর্কে জানবো ইন শা আল্লাহ। আপডেট পেতে @Islam_Insight এর সাথেই থাকুন।