ইসলাম ইনসাইট

ইসলামের স্বর্ণযুগের আলোকবর্তিকা (২য় পর্ব)

ইসলামের স্বর্ণযুগ

পাঁচজন মহান মুসলিম বিজ্ঞানী

মধ্যযুগের মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। প্রথম পর্বে আমরা তিনজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর সাথে পরিচিত হয়েছি। এই পর্বে আমরা আরও পাঁচজন মহান মুসলিম বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরব।

 

০১.  ইবনে আল-হাইথাম (আবু আলী হাসান ইবনে আল-হাইথাম)

ইবনে আল-হাইথাম ছিলেন একজন প্রখ্যাত পদার্থবিদ, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের বসরায় জন্মগ্রহণ করেন। আলোকবিজ্ঞানে তার গবেষণা তাকে “অপটিক্সের জনক” উপাধি দিয়েছে। তার রচিত “কিতাব আল-মানাজির” (দর্শনীয়তার বই) গ্রন্থে তিনি আলোর প্রকৃতি, প্রতিবিম্ব, প্রতিসরণ এবং চক্ষুবিজ্ঞানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার গবেষণা আধুনিক ক্যামেরা এবং টেলিস্কোপের আবিষ্কারে ভূমিকা রেখেছে।

 

০২.  আল-রাজী (মুহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া আল-রাজী)

আল-রাজী ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক, রসায়নবিদ এবং দার্শনিক। তিনি ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইরানের রে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি “আল-হাউয়ি” (সার্বিক চিকিৎসা) নামে একটি বিশাল চিকিৎসা বিশ্বকোষ রচনা করেন। তিনি গুটি বসন্ত ও হাম সম্পর্কিত গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার রসায়নবিষয়ক কাজগুলোর মধ্যে “কিতাব আল-আসরা” (গোপনীয়তার বই) উল্লেখযোগ্য।

 

০৩. উমর খৈয়াম (ঘিয়াস আদ-দীন আবুল ফাতহ উমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খৈয়াম)

উমর খৈয়াম ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, এবং কবি। তিনি ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। জ্যামিতি ও বীজগণিতে তার গবেষণা উল্লেখযোগ্য। তিনি ক্যালেন্ডার সংস্কারে কাজ করেছেন, যা ইরানি ক্যালেন্ডারের ভিত্তি। পার্সিয়ান ভাষায় রচিত তার “রুবাইয়াত” (চারপদী কবিতা) সারা বিশ্বে সমাদৃত।

 

০৪.  আল-জাহরাউই (আবুল কাসিম খালাফ ইবনে আব্বাস আল-জাহরাউই)

আল-জাহরাউইকে শল্যচিকিৎসার জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের কর্ডোবায় জন্মগ্রহণ করেন। তার রচিত “আত-তাসরিফ লিমান আজিজা আনিত-তালিফ” গ্রন্থে তিনি শল্যচিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। এই গ্রন্থটি পাঁচ শতাব্দী ধরে ইউরোপের চিকিৎসা শিক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে।

 

০৫.  ইবনে বতুতা (মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বতুতা)

ইবনে বতুতা ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটক ও ভূগোলবিদ। তিনি ১৩০৪ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর তাঞ্জিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন এবং তার অভিজ্ঞতা “রিহলা” (ভ্রমণ কাহিনী) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। তার ভ্রমণকাহিনী মধ্যযুগের সমাজ, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক তথ্যের অমূল্য সম্পদ।

 

এই পর্বে আমরা আরও পাঁচজন মুসলিম বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় পেলাম, যারা মধ্যযুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অমূল্য অবদান রেখেছেন। পরবর্তী পর্বে আমরা আরও কিছু বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী সম্পর্কে জানব।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore