ইসলাম ইনসাইট

বাবরি মসজিদ – একটি শহীদী মসজিদের কথন

 

 

আজ ৬ ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের শাহাদাত দিবস। বাবরি মসজিদের বিষয়ে কথা বলার আগে চলুন আমরা জেনে নেই আল্লাহর কাছে মসজিদের মর্যাদা কতটুকু। নবীজি ﷺ এক হাদিসে বলেন “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তম স্থান হলো মসজিদ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্টতর স্থান হলো বাজার ” – (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)

 

এবার চলুন তাহলে বাবরি মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানা যাক।

 

বাবরি মসজিদ ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যার রামকোট পাহাড়ে অবস্থিত একটি পাঁচ শতাব্দীর প্রাচীন মসজিদ। ১৫২৮-২৯ খ্রিস্টাব্দে (৯৩৫ হিজরি) মুঘল সম্রাট বাবর তার সেনাপতি মীর বাকিকে এই মসজিদটি নির্মাণের নির্দেশ দেন। মসজিদটি সুলতানি স্থাপত্যশৈলী প্রদর্শন করে।

 

১৫২৮ সালে মুঘল সেনাপতি মীর বাকি সম্রাট বাবরের সম্মানে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।

কিছু হিন্দুদের কথিত যুক্তি এই যে, তাদের ভগবান রামের এখানে একটি মন্দির ছিল, যা ভেঙে ফেলার পরে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। যদিও তাদের এই অসার যুক্তির পেছনে কোনো ধরনের প্রমাণ তারা দেখাতে পারে নি।

১৯৮০ এর দশকে জায়গাটি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত হয়ে ওঠে যখন ভিএইচপি সেখানে একটি রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে একটি প্রচারণা শুরু করে। তাদের প্রচারণা শেষ হয়েছিল ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ এ এক মর্মান্তিক সমাবেশে যা মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে শেষ হয়। এই ধ্বংসাযজ্ঞের ফলে ভারত জুড়ে কয়েক মাস ধরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয় যাতে ২,০০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়।

 

বিষয়টি লিখার সময় আল্লাহর সেই পবিত্র বাণীর কথা মনে পরে যায় “যে আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং তা বিরান করতে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় জালিম আর কে ? ” – (সুরা – বাকারা, আয়াত : ১১৪)।

 

মূল ঘটনাটি শুরু হয় ৬ ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ওরফে জালিম সংগঠন এবং এর সহযোগী উগ্র সংগঠনের সদস্যরা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ষোলো শতকের বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয়। বিতর্কিত স্থানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আয়োজিত একটি রাজনৈতিক সমাবেশের সময় এ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে। তাদের এক কর্মী ব্যারিকেড অতিক্রম করে মসজিদের কাঠামোর উপরে একটি জাফরান পতাকা উত্তোলন করার পরে জনতার ভিড় হিংস্র হয়ে ওঠে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উন্মাদ জনতা দেশীয় অস্ত্র, হাতুড়ি এবং খালি হাতে মসজিদটিকে ভাঙ্গতে শুরু করে।

 

তাদের অপরাধ শুধু মসজিদকে ভাঙার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের তদন্তের জন্য হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মনমোহন সিং লিবারহানের নেতৃত্বে লিবারহান কমিশন গঠন করে। ১৬ বছর ধরে ৩৯৯টি বৈঠকের পর, কমিশন ৩০ জুন ২০০৯ তারিখে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০২৯ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। রিপোর্ট অনুসারে, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ এর ঘটনাগুলি “স্বতঃস্ফূর্ত বা অপরিকল্পিত ছিল না।” মার্চ ২০১৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এই অভিযোগে আবেদন করা হয়েছিল যে সিবিআই এল কে আদভানির মতো সিনিয়র বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এপ্রিল ২০১৭ সালে মুরলি মনোহর যোশী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার এবং এই মামলায় অভিযুক্ত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছিল।

 

বিভিন্ন রায়ের পর বাবরি মসজিদের জমির বিষয়ে আদালত সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সব মুসলিমদের হতাশ করে ১৯৯২ সাল থেকে চলা এই ২৮ বছর পুরানো মামলায় একপক্ষিক রায় দেয়। সেই রায়ে সব অভিযুক্তকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয় যা লখনৌয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব এই রায় প্রদান করেন। বিচারকের যুক্তি, ওই ঘটনাটি পূর্ব-পরিকল্পিত ছিল না এবং অভিযুক্তদের এর স্বপক্ষে নাকি পর্যাপ্ত প্রমাণও নেই। ফলে ৩২ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

 

এভাবেই বাবরি মসজিদ দখলে নিয়ে সেখানে শিরকের আখড়া বানিয়ে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের রাস্তা খুলে দেয় মোদির সরকার। এখনো সেখানে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জুলুম আল্লাহর সাথে শিরক চলছে!! শুধু তাই নয়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানানোর পাঁয়তারা করছে সন্ত্রাসী বিজেপি সরকার! মসজিদের জায়গাকে মন্দিরের জায়গা দাবি করে সেখানে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার চক্রান্ত চলছে। এভাবে সমগ্র ভারত মসজিদশুন্য করার পায়তারা করছে তারা !!

 

উম্মাহর এই ক্রান্তিকালে যদি আমরা নিজেদের ভোগবিলাস নিয়েই ব্যস্ত থাকি, তাহলে একসময় আমাদের অবস্থা ভারত,আরাকানের মুসলিমদের চেয়েও খারাপ হবে। তাই সময় থাকতে সবাই জেগে উঠুন। নিজেদেরকে উম্মাহর সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলুন। তাহলে ইন শা আল্লাহ আমরা একদিন বাবরি মসজিদে আবারো সালাত আদায় করতে পারবো।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore