প্রতি বছরই উত্তর গোলার্ধের শীতকালে বিভিন্ন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এই ভাইরাসগুলোর কিছু নতুন রূপে আসে এবং কোনো কোনো বছর তা তুলনামূলকভাবে বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে সম্প্রতি চীনে মেটানিউমোভাইরাস (HMPV)-এর একটি নতুন সংক্রমণ ছড়ানোর খবর এসেছে। তবে এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা দরকার। আমরা এই আর্টিকেলে সেবিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করেছি।
মেটানিউমোভাইরাস এবং অন্যান্য ভাইরাস
মেটানিউমোভাইরাস নতুন বা অজানা কোনো ভাইরাস নয়। এটি আগে থেকেই পরিচিত। চীনে ছড়িয়ে পড়া এই স্ট্রেইনটি আগের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক কিনা, তার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।তবে শুধু মেটানিউমোভাইরাস নয়, বর্তমানে অন্য ভাইরাসগুলোরও প্রাদুর্ভাব রয়েছে।
HMPV সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণসমূহ
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে লক্ষণঃ
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে HMPV-এর লক্ষণগুলি প্রায়ই সাধারণ সর্দি বা ফ্লুর মতোই হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
১. অবিরাম কাশি, প্রায়ই শ্লেষ্মা দ্বারা অনুষঙ্গী।
২. নাক বন্ধ হওয়া বা নাক দিয়ে পানি পড়া।
৩. জ্বর, সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি।
৪. ক্লান্তি এবং শরীরের সাধারণ ব্যথা।
৫. গলা ব্যথা
৬. গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাস নিতে অসুবিধা।
শিশুদের মধ্যে লক্ষণ
শিশুদের মধ্যে গুরুতর উপসর্গ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যার মধ্যে রয়েছে:
১.শ্বাসকষ্ট
২. ক্রমাগত কাশি
৩.প্রচন্ড জ্বর
৪.ডিহাইড্রেশন
এই লক্ষণগুলো সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু’র মতো মনে হতে পারে, তবে রোগের তীব্রতা দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উচ্চ জ্বর দেখা দিলে ডেঙ্গুর কথা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু টেস্ট করানো সবসময় একটি বুদ্ধিমানের কাজ।
কখন হাসপাতালে যেতে হবে?
যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দেরি না করে হাসপাতালে যাওয়া উচিত:
১. স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হলে।
২. শ্বাস ফেলার জন্য কথার মাঝখানে থেমে যেতে হলে।
৩. হাত বা মুখ নীল হয়ে যাওয়া।
৪. ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া।
৫. অত্যন্ত ক্লান্তি বা অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হলে।
HMPV রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগগুলো স্ব-নিয়ন্ত্রিত (self-limiting) হয়। তাই ঘরোয়া চিকিৎসাতেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য যা করতে পারেনঃ
১. প্রচুর পানি পান করুন। তরল খাবার গ্রহণ করুন।
২. ব্যথা বা জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল নিন।
৩. গলাব্যথার জন্য গরম পানির গার্গল করুন।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
কিভাবে নিজেকে HMPV ভাইরাস থেকে Protect করবেন ?
ভাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। এজন্য কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান এবং পানি দিয়ে আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন । সাবান ও পানি না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয় এমন লোকদের থেকে দূরে থাকুন। প্রাদুর্ভাবের সময় জনাকীর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলুন।
দরজার হাতল, ফোন এবং কাউন্টারটপগুলির মতো বারবার স্পর্শ করা বস্তু নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
বাহিরে চলাচলের সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
মেটানিউমোভাইরাস, বার্ড ফ্লু, মিঙ্ক ভাইরাস, বা ইনফ্লুয়েঞ্জা A সহ যে কোনো ভাইরাসকে সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। তবে বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, চীনের মেটানিউমোভাইরাস কোনো নতুন মহামারির ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ভাইরাসের প্রকৃতি অপ্রত্যাশিত, তাই আমরা সতর্ক থাকবো, তথ্য আপডেট রাখবো, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই তবে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সর্বোপরি আল্লাহর উপর ভরসা রাখবো।