চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তি, দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার লড়াইয়ের মূল কারিগর পাহাড়ি সন্ত্রাসী মাইকেল চাকমা। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) অন্যতম মুখপাত্র এই ভারতীয় দালাল হত্যা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসাসহ ১১ মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশ্যে পাহাড়ি-বাংলাদেশী দ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি এবং অস্ত্র কেনায় লিপ্ত। মূলত খাগড়াছড়িতে কথিত ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে সাম্প্রতিক অস্থিরতার নেপথ্যেও তারই হাত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৮ বছর আগে শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের স্লোগান তোলে। আজও পাহাড়ে লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। চুক্তির সময় জমা না দেওয়া অস্ত্র এখনো তাদের হাতে আছে; তার সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন অস্ত্র, যার বেশির ভাগই চাঁদাবাজির টাকায় কেনা। এসব অস্ত্র মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মিয়ানমারের অনিরাপদ সীমান্ত দিয়ে আনা হয়।
- ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রক্তপাত
এক সময় পার্বত্য রাজনীতিতে আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও তপন জ্যোতি (বর্মা) হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য পরিকল্পনাকারীর ভূমিকাও নিহিত আছে মাইকেল চাকমার। ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ গঠিত হয়; মাইকেল ছিল এর অন্যতম সংগঠক। বিপরীতে শক্তিমান চাকমা ভিন্ন রাজনৈতিক পথ বেছে নেন।
২০১১ সালে রযাব অস্ত্রসহ মাইকেলকে গ্রেফতার করলে তার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয় এবং শক্তিমান জনপ্রিয় নেতা হিসেবে উঠেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাইকেল শক্তিমানকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।
২০১৮ সালের ৩ মে ওঁৎ-পেতে থাকা সন্ত্রাসী ইউপিডিএফ সদস্যরা নানিয়ারচরে শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে। পরদিন তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে যাওয়া তপন জ্যোতি ও সঙ্গীরা একইভাবে হামলার শিকার হয়ে নিহত হন। এসব ঘটনার পর শক্তিমানের সহকর্মী রূপস চাকমা মাইকেলসহ ৪৬ জনের নামে মামলা করেন।
- গুম, মুক্তি ও নতুন অস্থিরতা
পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে নিজেদেরই বিরোধের জেরে মাইকেল গুম হন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মুক্তি পান। এরপর সে আবার ইউপিডিএফের নেতৃত্বে ফিরে নাশকতার পরিকল্পনায় যুক্ত হয় যা এখনও চলমান। জেল থেকে বেরিয়ে এসে এই দ্বিমুখী (দ্বৈত) চরিত্রটি গণমাধ্যমে নিজেকে ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করে এবং ভারতের সাথে নিজের সম্পর্ক অস্বীকার করে।
- মাইকেল চাকমার বিরুদ্ধে মামলা
বিভিন্ন অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এই পাহাড়ি সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে, যদিও স্থানীয় সূত্র বলছে সংখ্যা ২০-এর বেশি।
নিচে সংক্ষেপে কিছু মামলার বিবরণ দেয়া হলো:
২০০৭ (লংগদু): চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে মামলা নং-০৪; অস্ত্রসহ গ্রেফতার।
২০০৭ (ভাইবোনছড়া): খুন ও চাঁদাবাজির ঘটনায় দেশীয় অস্ত্র ও গুলিসহ আটক (মামলা নং-৫)।
২০১১ (জুরাছড়ি): নিরঞ্জন চাকমাসহ তিনজনকে হত্যা; মাইকেল ১ নম্বর আসামি (মামলা নং-১)।
২০১১ (পাহাড়তলী): ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ (মামলা নং-১০)।
২০১৮ (নানিয়ারচর): শক্তিমান চাকমা হত্যা (মামলা নং-২); তপন জ্যোতি হত্যা (মামলা নং-৩/১১)।
২০১৮ (বাঘাইছড়ি): সুরেন বিকাশ চাকমা, বন কুসুম চাকমা ও মিশন চাকমা হত্যা মামলায় আসামি।
মাইকেল চাকমা বাংলাদেশের পাহাড় অশান্ত রাখার মূল নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করছে; তাই দেশের তৌহিদী জনতার উচিত এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।
এই সন্ত্রাসীকে দেশদ্রোহীর আইনের আওতায় আনার জন্য দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও দায়িত্বশীল মহলকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দিল্লির দালালকে দেশে বসে বাংলাদেশের মানুষের রক্ত নিয়ে আর খেলতে দেয়া যাবে না।