স্বৈরাচার বাশার আল আসাদের পতন হলো। সিরীয় জনগণের উপর চেপে বসা নির্মম স্বৈরতন্ত্র আসাদের পলায়নের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটল। আসাদ পরিবার প্রায় ৫৩ বছর ছিলো সিরিয়ার মসনদে। স্বৈরাচারী এই পরিবার বাথ পার্টির রাজনীতি করত ৷ চলুন এক নজরে এই পরিবারের সিরিয়া শাসনকাল দেখে আসি৷
বাথ পার্টির উত্থান, শাসন
১৯৬৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসে আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টি। দলটির তৎকালীন আদর্শ ছিল আরব ঐক্য, সমাজতন্ত্র ও আরব জাতীয়তাবাদ। কিন্তু ক্ষমতার মোহে সেই আদর্শ ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয় ওরা।
১৯৭০ সালে দলীয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন হাফিজ আল আসাদ। তার শাসনামলে সিরিয়ার রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়ে দেশের সামরিক ও বেসামরিক কাঠামো গ্রাস করে নেন হাফিজ।
২০০০ সালে হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় আসেন। একজন পশ্চিমা-শিক্ষিত চিকিৎসক হলেও মানুষ হত্যাকারী কসাই হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন আসাদ। তার নেতৃত্বে দেশের রাজনৈতিক সংস্কার স্থগিত হয়। বৃদ্ধি পায় সরকার বিরোধীদের ওপর নানামাত্রিক দমন-পীড়ন।
২০১১ সালের বিপ্লব, গৃহযুদ্ধের সূচনা
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ আছড়ে পড়ে সিরিয়ায়। গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার দাবিতে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামলে বাশার আল আসাদ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে দমন পীড়ন চালায়। ফলস্বরূপ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারবিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সশস্ত্র আন্দোলনে পরিণত হয়।
গণআন্দোলন দমনের জন্য বাশার আল আসাদ সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে। হাজারো মানুষ নিহত হয়। লাখো মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের ফলে দেশটি অনিবার্য ধ্বংসের মুখে পড়ে।
পতন ও পলায়ন
রোববার ভোরে রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ হারায় আসাদ সরকার। জনতার ঢল এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দৃঢ় অবস্থানের কারণে সরকারি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় শান্তিকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো।
এর আগেই নভেম্বরের শেষ দিকে আলেপ্পো, ইদলিব, দারা, এবং হিমসের নিয়ন্ত্রণ নেয় এইচটিএস নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোট ।
বিজয়, অপেক্ষা সুন্দর দিনের
দীর্ঘ ৬১ বছরের স্বৈর শাসনের অবসান ঘটলেও সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। দেশটি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। নতুন সরকার ও বিদ্রোহীদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।
সূত্র : অনাদোলু এজেন্সি