দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সহিংস গৃহযুদ্ধের আগুনে রয়েছে সিরিয়া। এই সংঘাত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির ভেতরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ ও আদর্শ নিয়ে সংঘাতে জড়িত। এসব গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড সিরিয়ার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।
সিরিয়ার সরকারি সেনাবাহিনী
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার সরকারি সেনাবাহিনী একসময় প্রায় ৩ লাখ সদস্য নিয়ে গঠিত ছিল। তবে ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের পর দমননীতি গ্রহণের ফলে বাহিনীতে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বর্তমানে রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায় পরিচালিত এই বাহিনীর মূল নেতৃত্বে রয়েছে শিয়া আলাভি সম্প্রদায়ের কর্মকর্তারা। তবে দেশব্যাপী সংঘাতের কারণে বাহিনীর কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
জাতীয় সেনাবাহিনী
২০১৭ সালে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত হয় জাতীয় সেনাবাহিনী। প্রায় ৬০ হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত এই বাহিনী সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান হামাদা এর নেতৃত্বে রয়েছেন।
হাইয়াত তাহরির আশ-শাম ( এইচটিএচ )
২০১৬ সালে আল কায়েদা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গঠিত হয় হাইয়াত তাহরির আশ-শাম। ২০১৭ সালে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে একীভূত হয়ে এটি বর্তমানে ইদলিব এবং পশ্চিম আলেপ্পোর কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ২০২২ সালে এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়।
সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)
মার্কিন সহায়তায় গঠিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) বর্তমানে মাজলুম আবদির নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় ১ লাখ যোদ্ধার এই বাহিনী দায়েশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে তুরস্ক অভিযোগ করে যে, এসডিএফ-এর কুর্দি ইউনিটগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পিকেকে’র সাথে সম্পৃক্ত।
নিউ সিরিয়ান আর্মি
২০১৫ সালে মার্কিন সহায়তায় গঠিত নিউ সিরিয়ান আর্মি বর্তমানে ‘মাগাওয়ির আস-সাওরা’ নামে পরিচিত। কর্নেল সালিম তুর্কি আল আনতারির নেতৃত্বে পরিচালিত এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০০। দলটি সিরিয়ার তানাফ অঞ্চলে সক্রিয়।
সিরিয়ার এসব সশস্ত্র শক্তির অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং ক্ষমতার লড়াই দেশটির ভবিষ্যৎ কোন দিকে নিয়ে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: আল জাজিরা